১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:২৪

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

মাতৃভাষার জন্য দীর্ঘ দিন কারারুদ্ধ ছিলাম – ভাষা সৈনিক জাকারিয়া

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ নবীগঞ্জ পৌরসভা আয়োজনে বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ভাষা সৈনিক জাকারিয়া চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ। সংবর্ধনাকালে ভাষা সৈনিক ও দৈনিক মানবকন্ঠের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক জাকারিয়া চৌধুরীর নবীগঞ্জ পৌর-মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ ধরণের সৃষ্টিশীল উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ১৯৪৮ সাল থেকে একটু একটু করে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এতে সফলতা আসেনি। ১৯৫২ সালে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে আন্দোলন করে সফলতা আসে।

শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে ঊর্ধুকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলো মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আর সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদল ছাত্রকে নিয়ে তার মুখ বরাবর প্রতিবাদ করেছিলেন। এর মধ্য দিয়েই মূলত ভাষা আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। ভাষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা চির অমর। তাদের ঋণ কখনো শোধ করার নয়।

তিনি আরো বলেন, ২০ ফেব্র“য়ারি ১৪৪ ধারা জারি হলে ভঙ্গ করা হবে কি না এ নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্র“য়ারি সকাল ১১টার দিকে ছাত্র সমাবেশে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মতামত প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন এ্যাডভোকেট গাজীউল হক। গাজীউল হকের বক্তব্য উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাদেশিক পরিষদ ভবনের দিকে এগিয়ে গেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আম বাগানে পুলিশ ছাত্রদের উপর টিয়ারসেল, গুলি চালালে রফিক, জব্বার, বরকত ও সালাম নিহত হন। কিন্তু তার আগেই পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে লালবাগ থানায় যায়। তারপর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারুদ্ধ করে রাখে। মাতৃভাষার জন্য দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ ছিলাম।

জাকারিয়া খান চৌধুরী বলেন, অনেকেই মনে করেন একুশে ফেব্র“য়ারি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু তার চেয়ে বেশি প্রতিবাদ মুখর হয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে সারা বাংলাদেশে ২২ ফেব্র“য়ারি থেকে টানা ৫ দিন হরতাল পালিত হয়েছিল।

নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্যানেল মেয়র (১) এটিএম সালাম ও বইমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তীর যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বাহুবল সার্কেল) পারভেজ আলম চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও কবি তাহমিনা বেগম গিনি, নবীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ছাদেক হোসেন।

এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্যানেল মেয়র-৩ ফারজানা আক্তার পারুল, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রাণেশ চন্দ্র দেব, প্রধান শিক্ষক মোঃ রুবেল মিয়া, প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর বখ্ত চৌধুরী, কবি নিলুফা ইসলাম নিলু, সমাজসেবক আহমদ ঠাকুর রানা, কবি আব্দুল মোহিত রাসেল প্রমুখ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল হোসেন, দৈনিক মানবকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর চৌধুরী, কাস্টমস অফিসার কবি মো. গোলাম কিবরিয়া, কবি আফতাব আল মাহমুদ, প্রধান শিক্ষক আলী আমজাদ মিলন, কবি প্রতিমা বনিক, কবি আবু তাহের চৌধুরী, কণ্ঠশিল্পী বিন্দু সূত্রধর, কবি এমএ ওয়াহিদ লাভলু, মাওঃ আব্দুল রকিব হক্কানী, মোঃ আবুল কালাম মিঠু, সাহেল আহমেদ, ওয়াহিদুজ্জামান জুয়েল, সাংবাদিক মুহিবুর রহমান, সাংবাদিক ছনি চৌধুরীসহ কবিসাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন মাওলানা কাজী হাসান আলী এবং পবিত্র গীতাপাঠ করেন ধনঞ্জয় দেবনাথ।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ভাষা সৈনিক যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন কার্জন হলের আওয়াজ আমার কানে আসছিল। সে সময়ের ঢাকার রাজপথের মিছিলের শব্দ আমার কানে এসে লাগছিল।

তিনি আরও বলেন- পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী-সহ পৌর পরিষদ ‘অমর একুশে বইমেলা-২০১৯ আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল পেশায় নিয়োজিত করেছেন।

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, সকলের সহযোগিতা থাকলে পৌরসভার উদ্যোগে বইমেলার মতো সৃজনশীল উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। তিনি প্রধান অতিথি, সংবর্ধিত ব্যক্তিত্ব ও বিশেষ অতিবৃন্দকে অনুষ্ঠানে এসে সফল ও সার্থক করেছেন উল্লেখ করে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

আলোচনা পর্বের পর কয়েকজন লেখকের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন সভার অতিথিবৃন্দ ও সভাপতি। পরে সারেগামা সংগীত একাডেমীর শিল্পীবৃন্দের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

উল্লেখ্য গতকাল বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আলী ইমাম উদ্বোধক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক ৩ দিন ব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ উদ্বোধন করেন।