18.7 C
Habiganj
বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

Habiganj News

Habiganj News is the most popular online media and newspaper in the Habiganj district. It serves the latest news of Habiganj district.

ঐতিহ্যবাহী বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -
- Advertisement -

” ঐতিহ্যবাহী বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ ”

[ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ]

সিলেট বিভাগের ঐতিহ্যবাহী অনত্যম সেরা বিদ্যাপীঠ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ, হবিগঞ্জ। সরকারি এই কলেজটির রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস।

১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘ হবিগঞ্জ কলেজ ‘ কিছুদিন পর ‘ বৃন্দাবন কলেজ ‘ এবং ১৯৭৯ সালের ৭ মে জাতীয়করণের ফলে এর নামকরণ হয় ‘ হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ ‘। এক সময় বৃন্দাবন ডিগ্রি কলেজ নামে পরিচিত ছিল কলেজটি। বর্তমানে কলেজটির নাম বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ।

IMG 02062020

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :

১৯৩১ সালে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ম বিভাগে ২৬ জন, ২য় বিভাগে ১০জন ও ৩য় বিভাগে ২ জন সহ মোট ৩৮ জন পাশ করার গৌরব অর্জন করে।

১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব সাফল্য উদ্যোক্তাদের একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ উদ্যোগী করে তুলেছিল। এলাকার ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, এটাই ছিল তাদের স্বপ্ন।

এরপরই কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কলেজের জন্য হবিগঞ্জ শহরের মনোহরগঞ্জ বাজারে (বর্তমান কলেজ কোয়ার্টার ও রাজনগর এলাকার কিছু অংশ) পরিত্যক্ত লম্বা আকৃতির একতলা দালান ঘরে বাঁশের পার্টিশন দিয়ে ৩৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে হবিগঞ্জ কলেজ নামে যাত্রা শুরু করে সিলেট বিভাগের অনত্যম বিদ্যাপীঠ বর্তমান সরকারি বৃন্দাবন কলেজ।

কলেজের প্রয়োজনীয় জমি ও অর্থের যোগান না থাকা স্বত্তেও উদ্যোক্তাগণ হবিগঞ্জে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করায় ব্যপক প্রসংশিত হন।

প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জ জেলার প্রাণকেন্দ্রে ৬.২০ একর জমির উপর চতুর্দিকে দেয়াল ঘেরা মনোরম শ্যামল ছায়ায় অবস্থিত। কলেজটি অমলিন, উজ্জ্বল ও উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনায় মহিমান্বিত।

বর্তমান কলেজ ক্যাম্পাসের উত্তর সীমানা থেকে মাত্র কয়েক’শগজ দূরে মনোহরগঞ্জ বাজারের পশ্চিম প্রান্তে একটি লম্বা বাশের চালাঘর, তাতে বাশের পার্টিশন দিয়ে ২/৩ টি কক্ষ নির্মাণ করা হল। একটি ছোট একতলা বিল্ডিং-এ অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বসার জায়গা করা হল। এক পাশে অফিস। ৩০/৩৫ জন ছাত্র নিয়ে হবিগঞ্জ কলেজ শুধুমাত্র মানবিক বিভাগ নিয়ে একটি ইন্টারমেডিয়েট কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কয়েকজন তরুণ শিক্ষককে নিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। হবিগঞ্জ বারের এম. এ পাস কয়েকজন আইনজীবিও খন্ডকালীন অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কলেজের লেখাপড়া খুবই ভাল চলছিল। কিন্তু সমস্যা হল নবপ্রতিষ্ঠিত কলেজের অধ্যক্ষের পদটি অলংকৃত করার জন্য কোন যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। কলেজের নেতৃস্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব রায় সাহেব নদীয়া চন্দ্র দাস পুরকায়স্থের বিশেষ অনুরোধক্রমে কলকাতা রিপন কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এবং একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের খন্ডকালিন অধ্যাপক রায়চাঁদ-প্রেমচাঁদ বৃত্তিধারী ঈশান স্কলার বাবু বিপিন বিহারি দে রাজি হলেন ‘হবিগঞ্জ কলেজ’ এর অধ্যক্ষ হতে। বাবু বিপিন বিহারী দে নিজ জেলা তৎকালীন বৃহত্তর সিলেটের শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখার লক্ষ্যে কলকাতার অধ্যাপনার জীবন ত্যাগ করে ১৯৩১ সালের জুন মাসে নব প্রতিষ্ঠিত হবিগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন।

অধ্যক্ষ বিপিন বিহারী দে মহোদয়ের মাসিক বেতন নির্ধারণ হয় মাত্র ২৫ টাকা এবং অধ্যাপকদের মাসিক বেতন নির্ধারণ হয় ১৬ টাকা।

কিন্তু ঐ সময় একজন অধ্যক্ষের বেতন দেয়ার মত প্রয়োজনীয় তহবিল কলেজের ছিল না। অন্যদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের অধিভূক্তির পূর্বশর্ত ছিল ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্থায়ী সংরক্ষিত তহবিল প্রদর্শন এবং কোন প্রাদেশিক সরকারের স্বীকৃতি। উল্লিখিত পরিমাণ টাকার সংরক্ষিত তহবিল ঐ সময়ে প্রদর্শন করা সম্ভব হয়নি।

এ উভয়বিধ আর্থিক অসুবিধা দূর করার জন্য উদ্যোক্তাগণ শুরু থেকেই জোর প্রচেষ্টা চালান। এলাকার ধনী ব্যক্তিদেরকে অনুরোধ করা স্বত্তেও দশ হাজার টাকার সংরক্ষিত তহবিল সংগ্রহের সম্ভাবনা নাই দেখে কলেজ পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেন, যে ব্যক্তি কলেজকে দশ হাজার টাকা দান করবেন বা তার সমমূল্যের সম্পদ দান করবেন তার ইচ্ছানুসারে হবিগঞ্জ কলেজের নামকরণ হবে। এমতাবস্থায় কলেজ কমিটির সদস্য গিরীন্দ্র নন্দন চৌধুরী ও নদীয়া চন্দ্র দাস পুরাকায়স্থ সহ অন্যান্যদের অনুরোধে বানিয়াচং এর বিথঙ্গল গ্রামের বৃন্দাবন চন্দ্র দাস কলেজ সুষ্ঠভাবে পরিচালনার শর্তে কলেজের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে রাজি হন। ফলশ্রুতিতে বর্তমান বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল গ্রামের অধিবাসী বিত্তশালী মহাজন বাবু বৃন্দাবন চন্দ্র দাস কলেজে ১০ হাজার টাকা দিতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

দূরদর্শী ও বুদ্ধিমান বৃন্দাবন দাস কলেজের আর্থিক স্বচ্ছতা ও অগ্রগতির জন্য তারই অনুরোধে পুরোহিতের ছেলে সুরেশ চক্রবর্তীকে হেড ক্লার্ক হিসাবে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেন এবং তা কলেজ পরিচালনা পরিষদের নিকট গৃহীত হয়। হেড ক্লার্ক হিসাবে নিয়োগ পায় সুরেশ চক্রবর্তী।

মাতৃভক্ত বৃন্দাবন দাসের ইচ্ছা ছিল তার মায়ের নামে যেন কলেজের নামকরণ করা হয়। কিন্তু তার মা এতে রাজি হয়নি। কারণ তার ছেলের নামের সাথে পবিত্র তীর্থ স্থানের নামের মিল থাকায় তিনি ছেলের নামেই কলেজের নাম করণের প্রস্তাব করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন ছেলেকে।

এরপর বৃন্দাবন দাসের মায়ের ইচ্ছায় এবং কলেজ পরিচালনা কমিটির পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক হবিগঞ্জ কলেজের নামকরণ করা হয় ‘ বৃন্দাবন কলেজ ‘।

বৃন্দাবন চন্দ্র দাস কলেজের দশ হাজার টাকা এক কালীন প্রদান করতে পারেননি। প্রথমে তিনি নগদ তিন হাজার টাকা প্রদান করেন এবং বাকী সাত হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি জমি দান করেছিলেন। ৭০০০ টাকার পরিবর্তে বাবু বৃন্দাবন দাস কলেজের প্রিন্সিপাল বাবু বিপিন বিহারী দে বরাবরে ২৫/০৩/১৯৩২ খ্রি: তারিখে (রেজি: নং ৮১২ অনুযায়ী) একখানা একরার নামা দিয়েছিলেন যা ৬০ কেদার (৬০ বিঘা) ভূমির দলিল হিসেবে পরিচিত ছিল। জমিগুলো মাধবপুর থানার বেজুরা ও নবীগঞ্জ থানার দিনারপুর মান্দার কান্দি ও বানিয়াচং এলাকায় ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি পুনরায় ৭ হাজার টাকা স্ব ইচ্ছায় দান করেন। এবং পূর্বের দেওয়া ঐ জমি তিনি আর ফিরিয়ে নেননি। পরবর্তীতে ঐ জমিগুলো বিক্রয় করে প্রাপ্ত অর্থ কলেজের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হয়। দলিল সম্পাদনের ৫ মাস পরই তিনি মুত্যুবরন করেছিলেন। তাই এর পর আর কোন উন্নয়ন কাজে অংশ গ্রহণের সুযোগ তিনি পাননি।

কে ছিলেন বৃন্দাবন চন্দ্র দাস ??

হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারী কলেজ এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বৃন্দাবন চন্দ্র দাসের পরিচিতি ১৮৫০ সালে বর্তমান সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল গ্রামে জন্মগ্রহন করেন বৃন্দাবন চন্দ্র দাস। তার পিতা বিষ্ণু রাম চন্দ্র দাস ও মাতা মহামায়া দাস ওরফে ভ্রমরা দাসের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। বিষ্ণু চন্দ দাস পেশায় ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক।

কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া বৃন্দাবন চন্দ্র দাস অর্থের অভাবে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে কিশোর বয়সেই ব্যবসার কাজে জড়িয়ে পরেন। তার মেধা, মিতব্যয়ীতা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তিনি একজন সফল ব্যাবসায়ী হিসাবে বেশ খাতি অর্জন করেছিলেন। মহাজনী, মিরাশদারী, মহালদারী, (চিত্তরঞ্জন কটন মিলস ও অল ইন্ডিয়া সুগার মিলসের-এর শেয়ার হোল্ডার) সহ আরও বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।

ব্যাবসায় সফলতার মাধ্যমে তিনি ৫৬ টি তালুকের মালিক ও ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে চৌধুরী উপাধী লাভ করে ছিলেন। চৌধুরী উপাধী লাভ করেও তিনি নামের সাথে চৌধুরী উপাধী যুক্ত করেননি। ব্যক্তি জীবনে তিনি মিতব্যয়ী, জনদরদী ও শিক্ষ্যানুরাগী ছিলেন। ১৯৩২ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন এবং মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।

বৃন্দাবন চন্দ্র দাস সংরক্ষিত কলেজ তহবিল গঠন এর টাকা দান করার পর অধ্যক্ষ বিপিন বিহারী দে প্রয়োজনীয় সংরক্ষিত তহবিল দেখিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট কলেজ অধিভূক্তির আবেদন করেন। হবিগঞ্জ তখন আসাম প্রদেশের অন্তর্গত সিলেট জেলার একটি মহকুমা। আসাম প্রদেশ সরকার নীতিগতভাবে কোন মহকুমায় কলেজ প্রতিষ্ঠায় স্বীকৃতি দিতেন না। বিশেষ করে সিলেট জেলায় মুরারিচাঁদ কলেজ (এম. সি কলেজ, সিলেট) বিদ্যমান আছে। উল্লেখ্য, তখন আসাম প্রদেশে মাত্র তিনটি কলেজ ছিল। শিলং, গৌহাটি ও সিলেট এই তিন স্থানে তিনটি কলেজ। জনাব বিপিন বিহারী দে আসাম প্রদেশ সরকারের স্বীকৃতি লাভে ব্যর্থ হয়ে বেঙ্গল সরকারের কাছে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন। শেষ পর্যন্ত বেঙ্গল সরকারের স্বীকৃতি পেয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্তি লাভ করে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ আসাম প্রদেশের চতুর্থ কলেজ হল।

১৯৩৩ সালে কলেজের ১ম ব্যাচের ৩১ জন ছাত্ররা আই, এ পরীক্ষা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র দিতে রাজী হয়নি। পরীক্ষা কেন্দ্র হয় মুরারী চাঁদ কলেজে (এম,সি কলেজ, সিলেট)। ৩১ জনের সবাই পাশ করে এবং ভাল ফলাফলের জন্য ১৯৩৪ থেকে আই,এ পরীক্ষার কেন্দ্র কলেজে স্থাপিত হয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৩৯-১৯৪০ সালের শিক্ষাবর্ষে বি. এ (পাস) কোর্স চালু হয়। এবং ১৯৪০-১৯৪১ সালের শিক্ষাবর্ষে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় English, Political Economy and Political Philosophy – এই তিন বিষয়ে বি. এ. (অনার্স) কোর্স চালু করা হয়।

তখনকার সময়ে আসাম প্রাদেশিক সরকার হবিগঞ্জ মহকুমার মুনসেফদের বাসস্থানের জন্য নির্ধারিত নিষ্কর ভুমি হইতে (বর্তমানে অবস্থানরত) ২ একর ৯৯ শতক জায়গা উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের জন্য কলেজকে লীজ হিসাবে দান করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীনে চলে আসে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে কলেজে অনার্স কোর্স পড়ার বিধান না থাকায়, বৃন্দাবন কলেজ সহ পূর্ববাংলার সব কলেজ থেকে অনার্স কোর্স উঠিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৪৯-১৯৫০ সালের শিক্ষাবর্ষে কলেজে ইন্টারমেডিয়েট কমার্স কোর্স ও ১৯৫৩-১৯৫৪ সালের শিক্ষাবর্ষে বি. কম (পাস) কোর্স চালু হয়। ১৯৬০ সালে সারাদেশের কলেজ সমুহে অনার্স কোর্স চালু করা হলেও, নাম জঠিলতার কারনে বৃন্দাবন কলেজের অনার্স কোর্স চালু করা হয়নি। ১৯৬০-১৯৬১সালের শিক্ষাবর্ষে ইন্টারমেডিয়েট বিজ্ঞান শাখা ও ১৯৬৭-১৯৬৮সালের শিক্ষাবর্ষে বি. এস. সি (পাস) কোর্স চালু করা হয়। এভাবে কলেজটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজে পরিণত হয়। তখন হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ, বৃন্দাবন ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

বাংলাদেশে সরকার গঠিত হওয়ার প্রায় ০৭ বছর পর ১৯৭৯ সালের ৭ই মে বৃন্দাবন কলেজটিকে (সরকারিকরণ) জাতীয় করণ করা হয়। কলেজের নাম হয় বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ। অবশেষে ১৯৯৮-১৯৯৯ সালের শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু করা হয় অনার্স কোর্স। তখন মোট ৭ টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। এবং ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ হতে সর্বপ্রথম মোট ৫ টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তন করা হয়।

বর্তমানে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখা সহ স্নাতক (পাস) কোর্সে বি. এ, বি. এস. এস, বি. বি. এ এবং বি. এস. সি কোর্স চলমান আছে। একই সঙ্গে মোট ১৪ টি বিষয়ে (পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, গণিত, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন) স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স কোর্স চালু আছে।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে ইসলামী শিক্ষা, আইসিটি ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখনকার অধ্যক্ষ জনাব, প্রফেসর মো: এলিয়াছ হোসেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে বিভাগ তিনটির জন্য আলাদা রুম ও ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৮ সালে আরবী ও ইসলাম শিক্ষার জন্য ০২ জন শিক্ষক নির্ধারণ করা হয়। আইসিটি বিভাগের জন্য ০২ জন এবং শারীরিক শিক্ষা বিভাগের জন্য ০১ জন অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারিভাবে বিভাগ গুলোতে এখনও কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি। বিভিন্ন বিভাগে ১২ টি নতুন অধ্যাপক, ১৮ টি সহযোগী অধ্যাপক, ৩২ টি সহকারী অধ্যাপক ও ২০ টি প্রভাষক পদ সৃষ্টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

কলেজে বর্তমানে প্রায় ৭৩ টি শিক্ষক পদের বিপরীতে ৫৮ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা ও প্রায় ২০ হাজার ছাত্র ছাত্রী রয়েছে।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা কাম একাডেমিক ভবনে আধুনিক আই সি টি ল্যাব এবং ফরেন ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং সেন্টার চালু রয়েছে। ০২ টি আধুনিক ছাত্রীনিবাস ও ৩০০ আসনের ০২ টি আধুনিক ছাত্রাবাস ভবন সদ্য নির্মাণ করা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে এবং হবিগঞ্জ ০৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য (২০০৮-বর্তমান) আলহাজ্ব এডভোকেট মো: আবু জাহির এম. পি মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৮ সালে কলেজ ক্যাম্পাস ব্রডব্যান্ড সংযোগসহ ওয়াই ফাই নেটওয়ার্কের আওত্ত্বায় আনা হয়।

২০০৮ সাল থেকে – এ পর্যন্ত মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এডভোকেট মো: আবু জাহির এম. পি মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কলেজ প্রসাশনের অক্লান্ত পরিশ্রমে ঐতিহ্যবাহী বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ আজ একটি মডেল কলেজে পরিণত হয়েছে। গড়ে ওঠেছে বিজ্ঞান ভবন, একাডেমিক ভবন সহ আরও অনান্য নতুন ভবন। সংস্কার করা হয়েছে পুরাতন সব কয়টি স্থাপনা ও প্রসাশনিক ভবন। কলেজে ০৮ টি শ্রেণিকক্ষে স্ক্রিনসহ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষকগণ এখন মাল্টিমিডিয়া ও ল্যাপটপ ব্যবহার করে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা এখন পরিচয়পত্রসহ নির্ধারিত পোশাক পড়ে কলেজে আসে। সকল ভর্তি কার্যক্রম, ফরম ডাউনলোড, নির্ধারিত ফি পরিশোধ, নিশ্চায়ন, রেজিস্ট্রেশন পভৃতি কার্যক্রম এখন অনলাইনে সম্পাদিত হয়। ছাত্র/ছাত্রীদের অভ্যন্তরীণ সকল পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর অনলাইনে প্রেরণ করা হয়। ভর্তির মেধা তালিকা, উপবৃত্তি, চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল, নোটিশ ইত্যাদি কলেজ ওয়েবসাইটে (www.bc.gov.bd) প্রকাশ করা হয়।

তথ্যসূত্র :

০১/ একাডেমিক ক্যালেন্ডার, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ।
০২/ বাংলাদেশ লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা (হবিগঞ্জ), বাংলা একাডেমী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
০৩/ Wikipedia, Google
০৪/ হবিগঞ্জ জেলার ইতিহাস, লেখক : মো. সায়েদুর রহমান।

লেখক : কে. এম. আবু বকর
সিনিয়র শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ।

বি: দ্র: লেখকের অনুমতি ব্যতিত লেখাটির আংশিক বা সম্পূর্ণ অংশ কপি/পেস্ট করা নিষিদ্ধ। তবে লেখাটি যে কেউ শেয়ার করতে পারবেন।

- Advertisement -

প্রিয় পাঠক

আপনার আশেপাশের যে কোন সমস্যার কথা আমাদেরকে লিখে পাঠান। এলাকার সম্ভাবনার কথা, মাদক, দুর্নীতি, অনিয়ম আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ পাঠিয়ে দিন আমাদের ই-মেইলে। ই-মেইলঃ habiganjnews24@hotmail.com

আমাদের সাথে থাকুন

22,341FansLike
1,342FollowersFollow
5,234FollowersFollow
3,542SubscribersSubscribe

জনপ্রিয় সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ
Related

শনিবার “হাওরে অবস্থান কর্মসূচী” বাপার

বিল্লাল আহমেদ: হবিগঞ্জের লাখাইয়ে আগামী শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর...

বানিয়াচংয়ে চেক জালিয়াতির মামলা ঝর্না আক্তারের নামে

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে চেক ডিজঅনার মামলায় এক নারীকে ১০ মাসের...

মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক গাজী শাহজাহান চিশতী স্মরণে দোয়া মাহফিল

বিল্লাল আহমেদ: হবিগঞ্জের লাখাইয়ে সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা, সাদা...

লাখাইয়ে নির্বাচনী ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন নামিয়ে ফেলেন উপজেলা প্রশাসন

বিল্লাল আহমেদ: হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে আওয়ামী লীগ...