১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:২০

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

নিজেই গাড়ি বানালেন নারায়ণগঞ্জের আকাশ

শুরুতে অনেকেই উপহাস করতো। কটূক্তিও কম সহ্য করতে হয়নি। কিন্তু সেসবে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের কাজ করে যেতে থাকেন আকাশ।

বলা হয়ে থাকে, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’।  চেষ্টা করলেই যে কোনো অসম্ভবকেও সম্ভবে পরিণত তারই আরো একটি উদাহরণ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম লামাপাড়া এলাকার আকাশ আহমেদ।

কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় সে তৈরি করেছে বিশ্বখ্যাত বিলাসবহুল স্পোর্টস কার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘ল্যাম্বরগিনি’র আদলে একটি গাড়ি। যা এখন নারায়ণগঞ্জের টক অব দ্যা টাউন। ফেসবুকের কল্যাণে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এ গাড়ির ছবি। সবার মুখে মুখে এখন আকাশে কৃতিত্বের কথা।

তবে এ কৃতিত্ব অর্জন করা সহজ ছিলো না আকাশের কাছে। অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ১৪ মাস প্রচেষ্টার পর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার।

ঢাকা ট্রিবিউনকে এমনটাই জানালেন আকাশ।

তার ভাষায়, “গাড়ি বানানোর স্বপ্নটা ছোটবেলা থেকেই ছিলো। গাড়ির মাঝেই আমার বেড়ে ওঠা। গাড়ির যন্ত্রপাতি ছিলো আমার খেলার উপকরণ। বাবা অন্যের গ্যারেজে চাকরি করতো। দাদাও গাড়ি মেরামতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা-দাদাকে কখনো দেখতাম ভাঙা গাড়ি মেরামত করতে, আবার কখনোবা কারও গাড়ির পার্টস বানিয়ে লাগিয়ে দিতে। তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতাম নিজের একটা গাড়ির।”

আকাশ আরও বলেন, “গ্যারেজে বা রাস্তায় নতুন মডেলের কোনো গাড়ি দেখলেই ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠতো। কিন্তু বাবাকে বলার সাহস পেতাম না। কারণ এ স্বপ্ন পূরণের সামর্থ্য নেই আমার পরিবারের।”

“তাই একদিন নিজেই একটা গাড়ি বানাব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। এ গাড়িতে করেই দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবো।” যোগ করেন তিনি।

শুরুর গল্পটা শোনালেন, “সেই থেকেই মাথায় ভাবনাটা থিতু হয়ে রইল। আমার ঘরের ক্যালেন্ডারে পর্যন্ত গাড়ির ছবি। ক্যালেন্ডারের পাতায়ই ইতালির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘ল্যাম্বরগিনি’র একটা গাড়ির মডেল দেখে চোখ আটকে যায়। তখনই মনে হয় গাড়ি যদি বানাই তবে এই মডেলেই বানাবো। বাবাকে বলি। তারপরই  থেকেই লেগে পড়ি। লক্ষ্যে স্থির থেকে এগোতে থাকি।”

নিজেই ‘ল্যাম্বরগিনি’ গাড়ি বানালেন নারায়ণগঞ্জের আকাশ 2

শুরুতে অনেকেই উপহাস করতো। কটূক্তিও কম সহ্য করতে হয়নি। কিন্তু সেসবে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের কাজ করে যেতে থাকেন আকাশ। তার কাজে পরিবারের সমর্থন ছিল। অর্থের যোগান থেকে শুরু করে মানসিকভাবে সাহস দিয়েছেন তারা।.

অর্থ যোগানের গল্পটা আরও মজার, বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০-২০০ করে টাকা নিয়ে অল্প অল্প করে কাজ শুরু করেন তিনি। অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম প্রথম বেশ বেগ পেতে হয়েছে। একবার কিছু একটা ভুল হয়ে গেলে আবার নতুন করে শুরু করতে হতো। আকাশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে কেবল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত। আর ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা বলতে কেবল গ্যারেজে গাড়ির পার্টস তৈরি আর জাহাজের পাত কাটার অভিজ্ঞতাটা। আর নতুন কিছু শেখার একমাত্র উৎস ছিল ইউটিউবের টিউটোরিয়াল।

আকাশ বলেন, “জাহাজ কাটার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইস্পাতের পাত কেটে কেটে গাড়ির বডি শেপ তৈরি করি। টিউটিরিয়াল দেখে দেখে চাকার সাসপেনশন, হেডলাইট, ব্যাকলাইট, গিয়ার নিজেই বানাই। চাকা আর স্টিয়ারিং হুইলটাই কেবলমাত্র কিনে আনা হয়েছে।”

সম্পূর্ণ দেশীয় ও পরিবেশ বান্ধব এই গাড়িটি ব্যাটারিচালিত। এর শক্তির উৎস ৫টি ব্যাটারি। যা প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। পুরোপুরি চার্জ হতে লাগবে ৫ ঘণ্টা। সর্বোচ্চ দু’জন আরোহীকে নিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে ছুটতে পারে সে।

নবীগঞ্জে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংঃ আন্দোলনের হুশিয়ারী

গাড়িটির নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ টাকা। তবে গাড়ির বডি কার্বন ফাইবারে নিয়ে আসলে ৩ লাখ টাকায়ও বানানো সম্ভব। গাড়িটির আরও কিছু কাজ বাকি আছে বলে জানান আকাশ। সুইচের মাধ্যমেই যাতে দরজা বন্ধ এবং খোলা যায় সে ব্যবস্থাও করা হবে।

শুধু নিজের জন্যই নয়, দেশের মানুষের জন্য এমন আরও গাড়ি বানাতে চায় আকাশ। জানালেন, গাড়িটি বানানোর পর বেশ সাড়া পেয়েছি। দেশীয় প্রযুক্তি ও পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় এরইমধ্যে আরও ২৫টি গাড়ির অর্ডার পেয়েছি।

সরকারের কাছে তিনি তার গাড়ি বাজারজাতকরণের অনুমতি চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ অন্য কারও কাছে তিনি এর নকশা বিক্রি করতে চান না।