১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:৫২

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

প্রথম মৌসুমেই ৫২১ কোটি টাকার চা বিক্রি

দেশে চায়ের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে চায়ের বাজারও। বাড়তি চাহিদা ও বাজার বিস্তৃতির বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৮ সালে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চালু হয় পানীয় পণ্যটির আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র। কার্যক্রম শুরুর পর থেকে দেশে চায়ের এ দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্রটি প্রত্যাশা অনুযায়ী বেশ ভালো করছে। এ কেন্দ্রে প্রথম মৌসুমের ১০টি আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নিলামে সব মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি কেজি চা। পানীয় পণ্যটির বিক্রি বাবদ সম্মিলিত আয় ৫২১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন হয়। তবে কেন্দ্রের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয় পরের বছরের মে মাসে এসে। প্রথম মৌসুমে এ নিলাম কেন্দ্রে প্রতি মাসে একটি করে সর্বমোট ১০টি নিলাম আয়োজনের সূচি নির্ধারণ করে টি প্লান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিপিটিএবি)।

শ্রীমঙ্গলে মৌসুমের সর্বশেষ নিলামটি অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। নিলাম প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মৌসুমজুড়ে এ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ১০টি নিলামে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫০ কেজি চা বিক্রি হয়েছে। পানীয় পণ্যটির বিক্রি বাবদ সব মিলিয়ে আয় হয়েছে ৫২১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

টিপিটিএবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৪ মে শ্রীমঙ্গল কেন্দ্রে প্রথম আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নিলামে সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৫৭ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। এ বাবদ আয় হয়েছিল ১৫ কোটি টাকা। এ নিলামে প্রতি কেজি চা গড়ে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা। এ কেন্দ্রে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নিলামটি অনুষ্ঠিত হয় ২৫ জুন। এ নিলামে মোট ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫০ কেজি চা বিক্রি হয়। পানীয় পণ্যটির গড় দাম দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ২৭০ টাকা। বিক্রি হওয়া চায়ের বাজার মূল্য ছিল ৩৫ কোটি টাকা। ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত তৃতীয় নিলামে ৫১ কোটি টাকায় সব মিলিয়ে ১৮ লাখ ৪ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২৭৫ টাকা। সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা।

২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে চতুর্থ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ২২ লাখ ১১ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়। গড় দাম দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ২৮০ টাকা। সর্বোচ্চ দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩৯০ টাকা। এ নিলামে সব মিলিয়ে ৬৮ কোটি টাকার চা বিক্রি হয়েছিল। ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পঞ্চম নিলামে ৭০ কোটি টাকায় মোট ২২ লাখ ৯১ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। এ সময় পানীয় পণ্যটির সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৩৩০ টাকা। আর গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৯৮ টাকা। ২৯ অক্টোবর ষষ্ঠ নিলামে পানীয় পণ্যটির বেচাকেনা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ লাখ ৭২ হাজার কেজিতে। আয় হয় ৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২৯৫ টাকা। সর্বোচ্চ দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩৩০ টাকা।

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলের সপ্তম নিলামে ২৪ লাখ ৯৬ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা। আর গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৯০ টাকা। বিক্রি হওয়া চায়ের বাজারমূল্য ছিল ৭৪ কোটি টাকা। ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম নিলাম। এতে ৭৫ কোটি টাকায় মোট ২৬ লাখ ৩ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল। এ সময় প্রতি কেজি চায়ের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৫০ টাকা। আর গড় দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা।

শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় নবম আন্তর্জাতিক নিলাম। এ নিলামে ৫৮ কোটি টাকায় মোট ১৯ লাখ ৭২ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়। সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা। আর গড় দাম কেজিপ্রতি ২৪০ টাকা। এ কেন্দ্রে মৌসুমের সর্বশেষ দশম নিলামটি অনুষ্ঠিত হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। এ নিলামে ৩ লাখ কেজি চা বিক্রি হয়েছে। সম্মিলিত আয় দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২৭০ টাকা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চালুর অল্প সময়ের মধ্যে শ্রীমঙ্গলে চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র বেশ জমে উঠেছে। সিলেটে উৎপাদিত চা চট্টগ্রামের নিলাম কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার বদলে স্থানীয়ভাবে বিক্রির মাধ্যমে পণ্যের গুণগত মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। পরিবহন খরচ তুলনামূলক কম লাগায় লাভবান হচ্ছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

টিপিটিএবির সদস্য সচিব জহর তরফদার বলেন, শ্রীমঙ্গলে উন্নত মানের অনেকগুলো ওয়্যারহাউজ তৈরির কাজ চলছে। পরবর্তী নিলাম মৌসুম শুরুর আগেই এগুলোর কাজ শেষ হবে। ফলে আগামী মৌসুম থেকে এ কেন্দ্রে মাসে একটির পরিবর্তে দুটি আন্তর্জাতিক নিলাম আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।