১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৫:০৯

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

ফলের রাজা আম যেন থাকে বিষমুক্ত ও নিরাপদ

এম এইচ চৌধুরী জুনাইদঃ গত ৯ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মহামান্য বাংলাদেশ হাইর্কোট কর্তৃক এক যুগান্তকারী রায়ে, ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রয়োগ ঠেকাতে দেশের আম বাগানগুলোতে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে ফলের রাজা আমের আড়তগুলোতে আমে রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাব সমন্বয়ে দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।

বাজারে আসতে শুরু করেছে সুস্বাদু, রসালো নানান জাতের মৌসূমী আম। শহরে, গ্রামে গঞ্জের আনাচকানাচে বসবে আমের বাজার, আমের মেলা। আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও সর্বমহলে আমের কদর সবচাইতে বেশী। আম কাঁঠালের মৌসূম মধুমাস জ্যৈষ্ঠে আমাদের সমাজে আম নাহলে আর চলেইনা।

আমের মুকুল থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়। ঝড়ে পড়া আমের মুকুল দিয়ে রান্না করা টক জাতীয় খাবার অতি সুস্বাদু ও মুখরোচক। কঁচি আমের চাটনী, আচারের কথা বলাই বাহুল্য। মৌসূমের শুরুতে তৈরীকৃত আমের আচার সারা বছরই খাওয়া যায় ঘরে অথবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।

গাছে পাকা আম বাজারে আসার পর থেকে আম ছাড়া আর এক দিনও চলে না। বিষেশ করে শিশুদের প্রিয় মৌসূমী ফল হলো আম। নিজের গাছের আম হোক কিংবা বাজার থেকে কেনা আমই হোক, আম খাওয়া চাই।

এ সময় আত্মীয়তার সেতু বন্ধনে কিংবা রুগী দর্শন যেখানেই হোক আমের কদর সবার উপরে। বাড়িতে আসা অতিথি আপ্যায়নেও আম অপরিহার্য্য বস্তু। জামাই শশুরালয়ে যেতেও আমের প্রয়োজনীয়তা সবার আগে।

আমাদের দেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন যে ছুটি বরাদ্ধ আছে, গ্রাম গঞ্জের স্কুলগুলোতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ ছুটিকে এখনও আম কাঁঠালের ছুটিই বলে থাকেই পছন্দ করে।

বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির আম চাষ করা হয় জাতভেদে সেগুলোর নাম যেমন, ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, গোপালভোগ, কাঁচামিঠা, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি আরও অনেক। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে প্রচুর পরিমাণে আম চাষ হয়ে থাকে।

তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমানে আম আমদানী করতে হয় চাহিদার কারণে। দেশের শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামে এমন একটি বাড়িও খোঁজে পাওয়া যাবেনা যে বাড়িতে আমগাছ নাই।

পুষ্টি ও ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ আম, স্বাদে ও সুগন্ধে অতুলনীয়। তাই আম‘কে বলা হয় ফলের রাজা। আমে প্রচুর ভিটামিন ও ক্যালোরি রয়েছে । আমের ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতায়ও ভিটামিন সি প্রয়োজন।

আমে আরও রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও বি-২। আমে বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তস্বল্পতা দূর করে ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। পাকাআম আঁশসহ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পাকাআম রক্তে কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন প্রজাতীর আমের আদ্যোপান্তের নীরিখে নিশ্চিত করে বলা যায় আম হচ্ছে ফলের রাজা, আমের রসে হয় রশনা তাজা। পাশাপাশি এই মধুমাসে আম আমাদের অপরির্হায্য একটি অন্যতম ফল।

বাজারজাতকৃত আমে প্রত্যেক বছরই কিছু অর্থপ্সিু ব্যবসায়ী বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক পর্দাথ মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করে। ওই রাসায়নিক উপাদানগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক, জীবননাশী ও মরণঘাতি রোগ ক্যান্সারের সহায়ক।

সম্প্রতি মহামান্য বাংলাদেশ হাইর্কোট এক যুগান্তকারী রায়ে, আমে রাসায়নিকের প্রয়োগ ঠেকাতে দেশে আমের বাগান গুলাতে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে ওই সমস্ত প্রবঞ্চক ব্যবসায়ীদেরকে এহেন গর্হিত কাজ থেকে বিরত রেখে মধুমাসে ফলের রাজা আমকে বিষমুক্ত ও সুরক্ষিত করে মহামান্য হাইর্কোটের আদেশ বাস্তবায়ন করবেন এটাই প্রত্যাশা আপামর জনসাধারণের।