৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:৫৩

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

বানিয়াচঙ্গে এমপির বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আরচণ বিধি ভঙ্গ করে প্রচার-প্রচারণা ও ভোটারদের বিভিন্ন ধরনের হুমকির অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন খান।

রোববার (৩ মার্চ) দুপুরে জেলা নির্বাচন অফিসার ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন স্বতন্ত্র এই প্রার্থী।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন খান উল্লেখ করেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরন বিধিমালা ২০১৬ এর ২ (১৪) ধারা অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য সরকারী সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কিন্তু হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান গত ২৩ ফেব্রুয়ারী শনিবার বানিয়াচং উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নস্থ মার্কুলী বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ আয়োজিত নৌকা প্রতীকের সমর্থনে জনসভায় প্রচারণামূলক বক্তব্য রাখেন এবং নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। অন্যতায় এই ইউনিয়নের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থগিত হয়ে যাবে বলেও হুশিয়ারী দেন।

এর দু’দিন পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারী বানিয়াচং ১নং উত্তর-পুর্ব ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলা যুবলীগের নামে বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করে হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা করে নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। ওই বর্ধিত সভায়ও তিনি নৌকায় ভোট না দিলে উন্নয়ন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাবে বলে হুশিয়ারী দেন।

অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরো উল্লেখ করেন, এমপি আব্দুল মজিদ খান প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও তথা কথিত বর্ধিত সভার নাম দিয়ে নেতাকর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি ও হুমকি ধামকি বিভিন্ন ইউনিয়নে সভার আয়োজন করাচ্ছেন। আর ওই সব সভায় এমপি স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। যা নির্বাচনী আচরন বিধি শুধু লঙ্ঘনই হচ্ছে না নির্বাচনী পরিবেশকে ঘোলাটে ও উত্তপ্ত করে তুলচে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন খান বলেন, আমার আনারস মার্কার কর্মী-সমর্থকদেরকে স্থানীয় সংসদ সদস্য বিভিন্নভাবে হয়রানি করারও হুমকি দিচ্ছেন। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য নির্বাচনী বিধিমালার ২২ ধারার পরিপন্থি। এতে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে সমানাধিকার খর্ব হয়েছে। যা বিধিমালার ৩ ধারার পরিপন্থি।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, অর্থ, পেশী শক্তি কিংবা স্থানীয় ক্ষমতা দ্বারা নির্বাচন প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। যা বিধিমালার ৩১ ধারার পরিপন্থি। তিনি যে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বক্তব্য রেখে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থণা করছেন তা স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গনমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বলে কয়েকটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা হাত উচিতে দেখান।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগকালে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন খান (আনারস) উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই গণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার ধারাবাহিকতায় আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। বঙ্গবন্ধু’র হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করে বর্তমানে উপজেলার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করছি। আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারো উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূল আওয়ামীলীগের ভোটে বিপুল ব্যবধানে আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম।

কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামীলীগকে আত্মীয় করণের লক্ষ্যে তাঁর নিকট আত্মীয়কে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত লবিং করেছেন। যার ফলশ্র“তিতে নৌকার বর্তমান প্রার্থী মনোনয়ন পান। আর এ মনোনয়নের ফলে তৃণমূল আওয়ামীলীগের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের প্রতিটা নেতাকর্মী তার সাথেই রয়েছেন বলেও দাবী করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন খান।

এ সময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের আরোপ করা সকল আইন মেনে চলেই আমি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেকজন প্রার্থী নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানকে সাথে নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু প্রচারণাই নয় বরং তাঁরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও নির্বাচনী সভায় অনুদানও ঘোষণা করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন।

জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন আমি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগটি পাঠিয়েছি।

অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা অভিযোগটি পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।