জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

বানিয়াচংয়ে পরকীয়া নিয়ে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি গিয়াসউদ্দিন গ্রেফতার, ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে শ্রমিকের স্ত্রী’র সাথে ঠিকাদার সুজাত পরকীয়া করার জন্য হত্যা করেছিলো শ্রমিক গিয়াসউদ্দিন।

ঠিকাদার সুজাত হত্যা মামলায় দীর্ঘ আড়াই বছর পাগলবেশে পলাতক থাকার পর অবশেষে পিবিআই’র গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয় ঘাতক গিয়াসউদ্দিন।

এবং গ্রেফতার হওয়ার পর উক্ত সুজাত হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে আদালতে।

সূত্রে জানা যায়,সিলেট সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাহিদপুর গ্রামে বানিয়াচংয়ের ঠিকাদার সুজাত মিয়া হত্যা মামলার প্রধাণ পলাতক আসামি বানিয়াচংয়ের গিয়াস উদ্দিন(৫০)কে গ্রেফতার করেন সিলেট জেলা পিবিআই।

এবং সুজাত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে গিয়াসউদ্দিন ।

২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারী রাত অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাহিদপুর তদন্ত কেন্দ্রের পাশে ভাড়াটিয়া বাসায় ঠিকাদার সুজাত মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো দা দিয়ে ঘুমের মধ্যে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় শ্রমিক গিয়াস উদ্দিন।

কিন্তু ঠিকাদার সুজাতের মৃত্যু না হলেও গুরুতর জহম হয়ে আহত হয়।

পরে আহত অবস্থায় ঠিকাদার সুজাত মিয়াকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তী করা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার ৫ দিন পর ১৯ জানুয়ারী সুজাত মিয়া সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

 

মৃত্যুর পর নিহতের স্ত্রী নার্গিস বেগম বাদী হয়ে গিয়াস উদ্দীনসহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় হত্যার উদ্যেশে একটি মামলা দায়ের করেন।

নিহত ঠিকাদার সুজাত মিয়া(২৬) হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৩নং দক্ষিণ পূর্ব ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডের বানেশ্বর বিশ্বাসের পাড়ার মৃত নুর আলীর পুত্র।

এবং গ্রেফতারকৃত আসামি গিয়াস উদ্দিন ও একই গ্রামের নিহত ঠিকাদারের পাশ্ববর্তী বাড়ির আঞ্জব আলীর পুত্র।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নার্গিস বেগম বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখমের অভিযোগে গিয়াস উদ্দীন সহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেন।

ছাতক থানা পুলিশ মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে গিয়াস উদ্দীনকে পলাতক দেখিয়ে এবং বাকি আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে ফাইনাল চার্জশীট দাখিল করেন।

পরে উক্ত চার্জশীটের অভিযোগ পত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদি নার্গিস বেগম।

বাদির নারাজি প্রদানের পর আদালত মামলাটি পিবিআই সিলেট জেলাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।

এদিকে পিবিআই সিলেট জেলার তদন্তকারী অফিসার(এসআই)মিন্টু চৌধুরী তার তদন্তকালে গোপন সূত্রে জানতে পারেন যে,ঘটনার পর থেকে ঘাতক গিয়াস উদ্দিন পাগল বেশে নিজের চুল,দাড়ি বড় করে দেশের বিভিন্ন মাজারে মাজারে এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন।

তবে ঘাতক গিয়াসউদ্দিন নিজে কোন মোবাইল ফোন ব্যবহার করত না।

উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ব্যাপক ভাবে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করেন পিবিআই।

এই ধারাবাহিকতায় গত ৯আগষ্ট (শনিবার) সিলেট গোয়াইনঘাট থানার সীমান্তবর্তী মনরতল এলাকায় পিবিআই অভিযান চালিয়ে গিয়াসউদ্দিনকে দীর্ঘ ২বছর ৬মাস পলাতক থাকার গ্রেফতার করা হয়।

গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেফতারকালে তার পরনে ছিল ছেড়া ও সেলাই করা পাঞ্জাবি।

এবং তার চুল,দাড়ি গোঁফ সবই বড় বড় এলোমেলো আকারে পাগলের বেশে ছিলো।

তার আচার আচরণ আপাত দৃষ্টিতে পাগলের মত মনে হলেও গ্রেফতারের পর পিবিআই’র ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তার সুস্থতার প্রকাশ পাওয়া পায়।

এবং পাগল রুপে আকার ধারণ করে নিজেকে আড়াল রাখতে ব্যর্থ হয়।

পিবিআই কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে,

সে পুরো ঘটনা বর্ণনা দেয় এবং বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে।

বিজ্ঞ আদালতে প্রদত্ত ফৌঃকাঃবিঃ এর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দিতে সে প্রকাশ করে বলে,সুজাত মিয়া একজন বিল্ডিংয়ের ঠিকাদার ছিলেন।

ছাতক থানা এলাকায় ঘটনাস্থলের সাইটে সুজাতের অধীনে গিয়াসউদ্দিন শ্রমিকের কাজ করাকালে তার স্ত্রী সুফিয়া বেগমের ঘরে তার অনুপস্থিতিতে ঠিকাদার সুজাত মিয়া প্রায়ই আসা যাওয়া করতো।

এক পর্যায়ে পরকীয়া সম্পর্ক তৈরী করে তার স্ত্রীর সাথে বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি ধারণ করে ঠিকাদার সুজাত।

এসব ছবি ধারনের দুই দিন পর সুজাত মিয়া বিল্ডিংয়ের সাইটে গিয়ে তার স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে মর্মে বুঝাতে চেষ্টা করে এবং তার মোবাইলে আসামী গিয়াস উদ্দীনের স্ত্রীর ছবি পর্যন্ত দেখায় ঠিকাদার সুজাত মিয়া।

উক্ত দৃশ্য দেখে গিয়াস উদ্দীন উত্তেজিত হয় এবং ছবি গুলো ডিলিট করতে বলে।

কিন্তু গিয়াস উদ্দিনের কথা রাজি হয়নি ঠিকাদার সুজাত।

এসময় গিয়াস উদ্দীন কাজ না করেই বাড়িতে চলে যাবে বলে সুজাতকে জানায়।

কিন্তু সুজাত বলে চলে গেলে তার বিরুদ্ধে চার লক্ষ টাকা চুরির মামলা দিবে।

এই ভয়ে আসামী গিয়াস উদ্দীন কোথাও যেতে পারছিলোনা।

এমনকি গিয়াসউদ্দিনকে ৮দিন আটকে রাখে এবং বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ঠিকাদার সুজাত মিয়া।

এসব ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদার সুজাতকে কুপিয়ে হত্যা করে।

এতোদিন গ্রেফতার এড়াতেই গিয়াসউদ্দিন পাগল বেশে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিলো বলে স্বীকারোক্তি প্রদাণ করে।