হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার নিভৃত পল্লী সন্তোষপুর এখন যেন এক যুদ্ধ বিধ্বস্ত জনপদ। যেন মৃত্যু উপত্যকা। সাবেক ও বর্তমান মেম্বারের আদিপত্য বিস্তারের মরন খেলায় তছনছ হয়ে গেছে বলভদ্র পাড়ের সাজানো গোছানো গ্রামটি।
২০১৭ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন ছুরত আলীর পুত্র আনোয়ার আলী। ২০১৯ সালে আবারও মারামারি। আবারও খুন। এবার খুন হলেন সিরাজ মিয়া নামে এক বৃদ্ধ।
তারপর ২০২০ সালের ২১ মার্চ আবারও দাঙ্গা। আবারও হত্যা। এবার একজন নয়, দুই জন। একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন, নাম নজরুল ইসলাম। অন্যজন চিকিৎসাধীন অবস্থায়; নাম তার বেনু মিয়া।
এই দুই খুনের ঘটনায় মামলা হওয়ার আগেই শুরু হয় প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট। অন্ততঃ ১৫০ টি ঘরের কোন অস্তিত্ব নেই। আছে শুধু শূন্য ভিটা।
১২০ টি বাড়িতে নেই কোন ঘরের চিহ্ন, নেই কোন গাছ পালা। গরু, ছাগল, হাস, মুরগী, কবুতর, পুকুরের মাছ; কোন কিছুই বাদ যায়নি বাদী পক্ষের লুটপাট থেকে।
এ ঘটনায় বাদী পক্ষের ২ জনের প্রাণ হানী যেমনি মর্মান্তিক; হামলা মামলায় অন্ততঃ ৬০০ লোক গৃহহীন হওয়াটাও অমানবিক।
খুন হয়েছে, মামলা হয়েছে। আসামী ৬২ জন, অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জন। মামলা তদন্ত হচ্ছে, বিচার হবে। ঘটনা প্রমাণ হলে বিচারে দোষী সাব্যস্থদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি হবে।
কিন্তু বিচারের আগেই আসামী পক্ষকে ও তাদের আত্মীয় স্বজনকে ভিটাচ্যুত করে, গৃহহীন করে, গ্রাম ছাড়া করে খুনের প্রতিশোধ নেওয়া রীতিমত বেআইনী কাজ। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে আসামীদের বাড়ি ঘর ভাংচুর, তাদের সর্বস্ব লুটপাট করাও আইনতঃ অপরাধ। কিন্তু এসকল কিছুই হচ্ছে।
ভূক্তভোগীদের একজন মাহবুব হবিগঞ্জের মানবিক পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বরাবরে উল্লেখিত ব্যাপক লুটপাটের প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছে। তার আবেদন হতে জানা যায় উল্লেখিত দুই খুনের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাদী পক্ষ কর্তৃক আসামীপক্ষের অনুমান দশ কোটি পাঁচ লক্ষ টাকার সম্পদ হানী হয়েছে; পরবর্তীতে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ইরি ধানও কেটে নিয়েছে বাদী পক্ষ, দাবী উক্ত মাহবুবের।
গৃহহীন অনুমান ৬০০ লোক। এই করোনা মহামারিতে তারা কোথায় থাকে, কোথায় খায় কেউ জানে না, কেউ খবরও রাখে না। গত ইদুল ফিতর তারা কোথায় উদযাপন করেছে, এই খবর নেওয়ারও কেউ নেই।
এই গৃহহীন, সহায় সম্বলহীন লোকগুলো আগামী ঈদুল আযহা কোথায় পালন করবে সেটাও কেউ জানেনা। কারো জানার গরজও নেই? বাধ্য হয়ে তাদের ২৯ জন লোক, যারা হত্যা মামলারা আসামী, নিম্ন আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জেল হাজতে গেছে।
তাদের কাউকে চিন্তিত কিংবা দুঃখিত হতে দেখা যায়নি। কারন জিজ্ঞাসা করলে জানায়, এতদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে, রোদে শুকিয়েছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে। অনাহারে অর্ধাহারে থেকেছে। এখন সরকারী মেহমানখানায় (জেলে) থাকা খাওয়ারতো ব্যবস্থা হলো! এটাইবা কম কিসে!