১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৭:৪৯

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

ভ্যালেন্টাইন দর্শন !

শারফিন চৌধুরী রিয়াজ

১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন ডে, বা ভালোবাসা দিবস। মূলতঃ রোমান পাদ্রী সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন এর চিরায়ত কৃতকর্ম ও নামানুসারে এ দিবসটির নামকরণ করা হয় ভ্যালেন্টাইন ডে।

ভিন্ন সূত্রে পাওয়া যায়, খ্রীষ্টধর্ম ত্যাগ না করায় ১৪ই ফেব্রুয়ারী সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা থেকেই তার আত্মত্যাগে এই দিনটি ভালোবাসার প্রতীক ভ্যালেন্টাইন ডে নামে স্মরণীয় হয়।

১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ নিয়ে নানান কল্পকাহিনী রয়েছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো তৃতীয় শতাব্দীতে রোমে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক একজন ধর্মযাজক ছিলেন। তৎকালীন শাসক দ্বিতীয় ক্লোডিয়াস উদ্ভট পরিস্থিতিতে বুঝতে পারেন- যে সব পুরুষের স্ত্রী আছে, তাদের তুলনায় যাদের স্ত্রী ও পরিবার নেই তারাই বেশী দায়িত্বশীল, সক্রিয় ও ভাল সৈনিক হতে পারেন। এই উপলব্ধি থেকেই বিচক্ষণ এই সম্রাট তরুণদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্রাটের এই অন্যায্য সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি গোপনে তরুণদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতেন। এতে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইনকে হত্যা করেন আর ভ্যালেন্টাইন পরিণত হন প্রেম ও ভালোবাসার মূর্তপ্রতীকে। সারসংক্ষেপ এই হচ্ছে ভ্যালেন্টাইন ডে, বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

জাঁকজমকপূর্ণ ও সুপরিচিত এই দিবসে ভালোবাসাবাসিতে বুকে বাড়তি সাহস যোগায়, লজ্জা ও জড়তা দূরে পালায়। যে কিশোরীকে নানান সংকোচ ও ভয়ভীতির কারনে বলতে পারিনি আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষ্যে এই সহজ ও সুবর্ণসুযোগে বলতে পারি আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী তোমার ইনভাইট, চাইনিজে খাবো, ফ্রি থেকো। চাইনিজ খেয়ে বন্ধুর সাজানো ফাঁকা বাসায় ভালোবাসা দিবস উপভোগ অথবা রিসোর্ট, ড্রিমল্যাণ্ড বা বাগানে বেড়ানোর পায়তারা।
পুরাতন প্রেমিক প্রেমিকাদের দিনভর ফাঁকা বাসায় ভালোবাসা দিবসে জৈবিক চাহিদা পূরণ। প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীটিও পরকীয়া প্রেমিকের সাথে বিশেষ এই দিনে অতৃপ্ত চাহিদা পূরণে কামনায় লিপ্ত, আত্মতৃপ্তিতে বেসামাল। বৃদ্ধ পতিতাভোগী খদ্দেরেরাও কন্যা বা নাতনী তুল্য কিশোরীকে নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে দেহপ্রসারে ব্যস্ত। রমনীবালা, নারী ও মাদক কারবারীদের বাজার থাকে তুঙ্গে এই ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে।
আবার টিনেজার কেউ কেউ না বুঝে সহজ সরলতার সুযোগে প্রতারিত হন। বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন। এই উদ্ভট পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই সর্বস্ব হারান। আবার কেউ কেউ ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষিতও হন।

আমাদের মা বাবারা অতি আশা ভরসা নিয়ে সন্তানসন্ততিদের স্কুল কলেজে পাঠান। কোন কোন মা বাবা আদরের সন্তানের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে স্কুল কলেজে যাতায়াত সঙ্গী হন। তবুও আমরা তাদের অগোচরে জড়িয়ে যাই প্রেম ভালোবাসায়। ইহা প্রাকৃতিক। শারীরিক গড়ন ও বেড়ে উঠার সাথে সাথে আমরা জৈবিক চাহিদার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে দিনদিন, বিশেষ করে কিশোর কিশোরী ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ প্রবণতা লক্ষণীয়। এ ব্যর্থতায় মাদকাশক্তিসহ বিভিন্ন অনৈতিকতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

নিজের মানুষিক ও জৈবিক চাহিদা পূরণই প্রেম ভালোবাসা। জীবনে সবকিছু পেতে হবে, তা নয়। যদি কিছু হারিয়ে যায়, তাও স্বাভাবিক। কিন্তু এ হারানোকে মেনে নিতে না পারাই অস্বাভাবিকতা ও ক্ষয়ে যাওয়ার কারন। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে। নিজের পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের ভালোবাসতে হবে। চ্যালেঞ্জের এ যুগে নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি সজাগ ও সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। এতে পিতা মাতা ও পরিবারের অগ্রভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সন্তানের বয়স, শারীরিক গঠন ও বেড়ে উঠার প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। সন্তানের চালচলন, আচরণবিধি, সঙ্গী ও যাতায়াতের প্রতি গভীর নজরধারী ও পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে। সন্তানের সাথে ফ্রি ও বন্ধুত্ব সম্পর্ক রেখে কাছে থাকতে হবে। সন্তানকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে হবে। প্রেমের শেষ পরিণতি দুঃখকষ্ট, যন্ত্রণা বা পতন জেনেও আমরা প্রতিনিয়ত প্রেমে পড়ছি। এর মূল কারন হলো, ইহা কাম বা ক্ষণিকের হলেও প্রশান্তি দায়ক।

১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে এই চাহিদা প্রাণবন্ত হয়, শতস্ফুর্ততা ফিরে পায়। তৃপ্তির ঢেকর তোলে। এই দিনে সকল বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে সকলেই আমরা উন্মোক্ততা ও স্বাধীনতা ফিরে পাই। ফুলেল শুভেচ্ছায় প্রকৃতি গোলাপের আভায় উদ্ভাসিত হয়। অমর ২১শের বই মেলায় কিশোর কিশোরী ও প্রেমিক প্রেমিকাদের উপচে পড়া ভীড়। প্রাণবন্ত হয় আকাশ বাতাস। এই ভালোবাসা তো মা বাবাও সন্তানসন্ততির মধ্যেও রয়েছে। কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবসে মা বাবাকে আমরা কি ফুলেল শুভেচ্ছায় ভালোবাসা জানাচ্ছি ? না, সকলেই যেনো নিজের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত রয়েছি !
ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবসে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন থাকুক সকলে।