হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে সিএনজি চালিত অটোরিকসা চালকদের ‘ট্রাফিক আইন বিষয়ক’ ৪ দিনের প্রশিক্ষণ প্রকল্পের ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সিংহভাগ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজিব ও সমন্বয়কারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের যোগসাজশেই প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা লুটপাটের আলামত পাওয়া গেছে। যদিও হবিগঞ্জ নিউজ’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভাইস চেয়ারম্যান সজিবই এর মূল হোতা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সিএনজি চালকদের ‘ট্রাফিক আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা’য় ৬০ জন চালককে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা। এর জন্য ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪০ টাকা বরাদ্দ হয়। প্রত্যেক চালককে প্রশিক্ষণ শেষে ১১শ’ টাকা করে দেয়ার কথা।
নিয়ম অনুযায়ি দুই ধাপে চারদিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রথম ধাপে গত ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারী ৩০ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারী ৩০ জনসহ মোট ৬০ জন চালক এ প্রশিক্ষণের আওতায় থাকার কথা। কিন্তু দুই ধাপে চারদিন প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা থাকলেও একদিনেই মাত্র কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মশালা সমাপ্ত করা হয়েছে। যেখানে নামে-বেনামে ৬০ জনকে দেখিয়ে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।
এমনকি, আগামী ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশিক্ষণ কর্মশালারও ৩০ জনেরও নামে-বেনামে অগ্রীম স্বাক্ষর দেখিয়ে টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
তালিকাতে দেখা যায়, প্রকল্প সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজীবের বোনের জামাতা, ভাগিনা, মামা, মামাতো ভাইসহ অন্যান্য স্বজন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অধিকাংশ নাম। এছাড়া পৌর যুবলীগের সভাপতি ও তার ২ শিক্ষার্থী ছেলে ও মানসিক ভারসাস্যহীন এ ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায়।
এর মধ্যে, প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার তালিকার ক্রমিক নং ২৬-এ রয়েছে পৌর যুবলীগের সভাপতি মন্টু মিয়ার নাম। আর তার দুই ছেলে লিমন মিয়ার নাম রয়েছে ২৪ নম্বারে এবং ইমন আহমেদ ৬ নাম্বারে। মানসিক প্রতিবন্ধী মাখন মিয়া রয়েছেন তালিকার ১১ নম্বারে, প্রকল্প সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজীবের বোনের জামাতা জামির মিয়ার নাম ১৫ নাম্বারে, মামাতো ভাই মোশারফ মিয়া ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারির ৫ নাম্বারে ও উমর ফারুক ৯-১০ ফেব্রুয়ারির তালিকার ৪ নাম্বারে, বোনের ছেলে রাজা মিয়া একই তালিকার ৫ নাম্বারে এবং জালাল মিয়া ২ নাম্বারে।
৯-১০ ফেব্রুয়ারির তালিকার ৩ নম্বারে থাকা এরশাদ মিয়া একজন কৃষক। তিনি জানান, প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেননা বা কোন ধরণের টাকা পয়সা পাননি।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের একটি মাত্র সংগঠন। এই সংগঠনের আওয়ায় দুইশ’ শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু এতবড় একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়েছে অথচ আমি জানি না। আমার কোন শ্রমিকও এখানে অনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করেনি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের নিয়ে এই কর্মশালা। অথচ আমি বিষয়টি জানি না। তাহলে কি হাওয়ার মধ্যে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়ে নাকি?’
এ ব্যাপারে কর্মশালার সমন্বয়কারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই কর্মশালাটি গত অর্থবছরের। যে কারণে দ্রুত শেষ করতে গিয়ে আমরা চারদিনের কর্মশালা একদিনেই শেষ করে নিয়েছি। বিষয়টি ইউএনও মহোদয় অবগত আছেন। তবে তালিকার কাজ সম্পূর্ণ করেছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজিব সাহেব। তালিকা তৈরীতে আমার কোন হাত নেই।’
জানতে চাইলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজীব বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলি।’ এরপর তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
প্রশিক্ষণার্থী তালিকার অনিয়ম সম্পর্কে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মতিউর রহমান খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,উক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান সজিব। উনি নিজে তালিকা গঠন করেছেন।আমি আপনাদের মাধ্যমে ভূয়া তালিকা সম্পর্কে জানলাম। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রশিক্ষণার্থীরা যদি ভূয়া চালক প্রমানিত হয় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হবে।