৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৮:০৯

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

আজ ১২ রবিউল আউয়াল

নবী জীবনের পূর্ণ আদর্শ ও
নীতি অনুসরণের দিন

মুনশী ইকবাল: বছর পরিক্রমায় আবার আমাদের সামনে হাজির হলো বিশ্বমানবতার মুক্তিদিশারী মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর জন্ম ও মৃত্যু দিবস। মানুষের জন্য একমাত্র আদর্শ হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা.। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমের মধ্যে এই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

নবী সা. নিজেও বলেছেন তোমাদের মধ্যে আমি শিক্ষক হিসেবে এসেছি। তাঁর আদর্শ ছাড়া মুসলমান অন্য কোনো আদর্শ গ্রহণ করতে পারবে না। অন্য কোনো আদর্শ গ্রহণ করে সফল হতে পারবেনা। শিশুকাল থেকে নিয়ে পরিপূর্ণ জীবন। ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তর্জাতিক প্রতিটি পর্যায়ে তিনি আদর্শ।

তাঁর অনুসরণের মধ্যে যে কেবল মুসলামনের জন্যই সফলতা তা নয় বরং দুনিয়াবী জীবনে যেকোনো মানুষ তার অনুসরণ করবে সেই সফলতা লাভ করতে পারবে। আর তাই ১২ই রবিউল আউয়াল কেবল মুসলমান নয় বিশ্ব মানবতার জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন।

এই দিবসটিতে মুসলমানরা মহানবী সা. এর জীবনের শিক্ষা-আদর্শ অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তোলার নতুন প্রেরণা লাভ করে। বিশেষ করে মহানবীর আবির্ভাবের আগ মুহূর্তের অন্ধকার যুগ, যে সময় মানব সমাজ চরম এক নিষ্ঠুর পাশবিক অবস্থার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছিল।

নবীজীর আদর্শের অনুসরণে তখনকার মানুষ কিভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন, এদিনে গোটা মুসলিম উম্মাহ সেই অবস্থার কথা স্মরণ করে এবং চলমান অবস্থায়ও ঐ সকল অশান্তির কার্যকারণ থেকে নিজ দেশ ও সমাজকে রক্ষায় দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে পারে।

নিজেদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জীবনের সকল অশান্তির কার্যকারণসমূহ দূর করে মহানবী সা. ও ইসলামের জন্য তাঁর নিবেদিতপ্রাণ সাহাবীদের জীবনের শিক্ষা-আদর্শের অনুসরণের জন্য নতুন করে শপথ গ্রহণ করে। গত দেড় হাজার বছর ধরে মুসলিম উম্মাহ শত প্রতিকূলতার মাঝেও এভাবেই ইসলামকে ধরে রেখেছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের বর্তমান যেই প্রেক্ষাপটে এবার মহান ও পবিত্র নবী দিবসের আগমন ঘটেছে, এই প্রেক্ষাপটের অসংখ্য ঘটনা এটারই প্রমাণ দিচ্ছে যে, জড়বাদী জীবনবোধ কেন্দ্রিক কোনো জীবন ব্যবস্থা ও কোনো সভ্যতা-সংস্কৃতিই মানবতার স্থায়ী কল্যাণ আনয়নে সক্ষম নয়।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে সমস্ত ঘটনাবলীর খবরাদি নিয়ে প্রতিদিনের পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয়, অতীতের কথা যাই হোক, বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল স্তরের শান্তিকামী মানুষ এ অবস্থা দেখে অত্যন্ত হতাশ ও উদ্বিগ্ন যে কোন পথে শান্তি আসবে?

এর উত্তরণের একটা বাস্তবতা হলো, পবিত্র নবী দিবসে গতানুগতিক কোনো দিবস পালন নয় বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যে ক্ষতিকর বিষয় ও এর যেসব কার্যকারণ মহানবী সা. যেই পদ্ধতিতে দূর করেছেন, সেই নীতিরই অনুসরণ করা।

মহানবী স. বলেছেন তোমরা যতক্ষণ কুরআন সুন্নাহর পূর্ণ অনুসারী থাকবে, কখনও বিপথগামী হবে না। বলাবাহুল্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুসলিম-অমুসলিম সকল সমাজেই বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান সমাজে আজ যেসব সমস্যা ও অশান্তি বিদ্যমান তার একমাত্র কারণ হচ্ছে ইসলামের ওপর মুসলমানদের খন্ডিত আমল।

ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার ফলে নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করলেও বহু মুসলিম নেতৃত্ব জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে ইসলামের ক্ষতি করে যাচ্ছে আর তাদের নেতৃত্বাধীন শোষণমুক্ত, অপরাধমুক্ত কোনো ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। আর এই অবস্থার সঙ্গে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী জীবনবোধকেন্দ্রিক ভোগবাদী শাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রভাবতো আছেই।

ফলে আমাদের অনেকেই ইসলামের ওপর খন্ডিতভাবে আমলের দ্বারাই ইসলাম ও নবী জীবনের আদর্শের ওপর পূর্ণ আমল হয়ে যায় ধরে নিয়ে বসে আছেন। বর্তমান জাতীয় ও বিশ্ব পরিস্থিতিতে বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থা এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ও ব্যর্থতা লক্ষ্য করেই আজ সকল শ্রেণীর মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে আত্মজিজ্ঞাসায় তাড়িত হওয়া এবং খন্ডিত ইসলাম ও খন্ডিত নবী অনুসরণে মুক্তির ধারণা থেকে পরিপূর্ণ ইসলাম ও নবীজীবনের পরিপূর্ণ অনুসরণের দিকে নিজেদের নিয়ে আসা। নবী দিবসের এই মোবারক দিনে সকল মুসলমানের কর্তব্য হলো নবীজীবনের উল্লেখিত পূর্ণ আদর্শের অনুসরণের কঠোর শপথ গ্রহণ করা।