মোঃ বাহার উদ্দিনঃ মানুষ বেচে থাকে তার স্বপ্নের গতিসীমা নির্ভর করে। আর সেই স্বপ্ন পুরণের জন্য তাকে সমাজ এবং পরিবারের সাথে প্রতিনিয়ত মনসতাত্তিক যুদ্ধ সংগ্রামে উত্তীর্ণ হতে হয়। তেমনি একজন নারী মিনারা খাতুন।
লাখাইয়ে যে কয়জন রত্নগর্ভা মহিয়সী নারী তাদের দীর্ঘ জীবন সংগ্রাম, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনকে আলোকিত করেছেন, নিজের স্বীয় প্রচেষ্টায় সন্তান সন্তুতিকে গড়ে তুলেছেন আলোকিত মানুষে, উন্নতির সুউচ্চ মিনারে তাদের একজন হলেন লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের মিনারা খাতুন। এ মহিয়সী নারীর জন্ম বি- বাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার তুলাইশিমূল গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।
তুলাইশিমূল গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ীতে বাবা আব্দুল কাইয়ুম ভূঁইয়া ও মাতা রওশন আরা বেগমের কোল আলোকিত করে ১৯৫৩ সালের ১৮ মার্চ জন্মগ্রহন করেন মিনারা খাতুন। বাবার চাকুরীর সুবাদে হবিগঞ্জ বি,কে,জি,সি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্তায় লাখাই উপজেলার কবার গ্রামের ঐতিহ্যবাহী নয়াবাড়ীর ছদর হোসেন এর জেষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ সামছুল ইসলামের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিয়ের পর ১৯৭২ সালে কৃতিত্বের সহিত এস,এস,সি পাশ করেন।১৯৭৩/৭৪ সেশনে তিনি হবিগঞ্জ পি,টি,আই এ ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালের ১০ই মার্চ মিনারা খাতুন লাখাই উপজেলার রাঢ়িশাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষীকা হিসাবে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে তিনি করাব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সর্বশেষ গুনিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরীরত থেকে ৩ মার্চ ২০১০ সালে অবসর গ্রহন করেন।রত্নগর্ভা মিনারা খাতুন এর স্বামী সামছুল ইসলাম নাদির হোসেন নাগুড়া ফার্ম উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরন করেন।
স্বামীর মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন মিনারা খাতুন। ৬ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জননী স্বামীর মৃত্যুর পর ছোট ছোট ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শোককে শক্তিতে পরিনত করে জীবনযুদ্ধে ব্যাপৃত হন।
একদিকে নিজের চাকুরী আর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে পড়েন অথৈ সমুদ্রে। নিজের অদম্য চেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। দীর্ঘ জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি তার প্রতিটি ছেলেমেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন।
বর্তমানে মিনারা খাতুন এর প্রত্যেকটি সন্তান স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। জেষ্ঠ পুত্র আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ মুশফিউল আলম আজাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও বার বার নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
দ্বিতীয় পুত্র মফিজুল আলম শামীম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হিসাবে কর্মরত। তৃতীয় পুত্র নুরুল আলম সোহেল প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার, চতুর্থ পুত্র সাইফুল আলম রুকন সিলেট উত্তর অঞ্চলের ডিবিপুলিশ এর ওসি হিসেবে কর্মরত, পঞ্চম পুত্র শফিউল আলম সুমন একজন ঠিকাদার, ষষ্ঠ পুত্র খাইরুল আলম শুভ আমেরিকা প্রবাসী। কন্যা রাফিয়া আক্তার জলি স্নাতক পাশ এবং গৃহিণী, ছোট কন্যা নিলুফা আক্তার নেলী স্নাতক এবং গৃহিণী।
রত্নগর্ভা মিনারা খাতুন জয়িতা অন্বেষণে ২০১০ সালে লাখাই উপজেলায় জয়িতা হিসেবে সন্মাননা পান। ২০১৫ সালে তিনি পবিত্র হজ্ব পালন করেছেন। এখনো তিনি অদম্য মনোবলে আকড়ে আছেন পরিবার পরিজন নিয়ে।



