১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৬:১১

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন, বিভিন্ন মহলের শোক

হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ১১ নং সেক্টরের কোম্পানী কমান্ডার, ভাষাসৈনিক ও জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোঃ ফজলুর রহমান চৌধুরী বাধ্যক জণিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না…রাজিউন)।

তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় হবিগঞ্জ শহরের ইনাতাবাদস্থ বাস ভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃতকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৮ পুত্র, ১ কন্যা, নাতি, নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মরহুমের আত্মীয় স্বজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, সাংবাদিকসহ আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শেষ বারের তাকে দেখান জন্য বাস ভবনে এসে ভীর করছেন।

তার মৃত্যুতে জেলা জুড়ে নামে আসে শোকের ছায়া। বাদ জোহর মরহুমে ১ম জানাজার নামাজ শহরের টাউন মসজিদ (চাঁন মিয়া) মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজার নামাজ পূর্ব মরহুমের ভাগ্নে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার সম্পাদক হারুনুর রশিদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন সুফী, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আউয়াল, টাউন মসজিদ কমিটির সভাপতি আবু সালেহ শিবলী, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহব্বায়ক অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান সদাগর, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আতাউর বর চৌধুরী মসনু, মরহুমের বড় ছেলে চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ প্রমূখ।

বক্তারা বলেন- মরহুম ফজলুর রহমান চৌধুরী একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে রেখেছেন অসামন্য অবদান। তার এই অবদানের কথা আজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবে।

Fojlu-Rahman-Chowdhury

তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন মাওলানা গোলাম মোস্তফা নবীনগরী।

জানাজার নামাজ শেষে মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এর নেতৃবৃন্দ।

মরহুমের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার নিজগ্রাম আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের সৌললী গ্রামে। সেখানে শেষবারের মত দেখার জন্য মরহুমের আত্মীয় স্বজনসহ আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো লোকজন এসে ভীড় জামান।

শুধু আজমিরীগঞ্জ নয়, কিশোরগঞ্জ জেলা মিটামইন, ইটনা, সুনামগঞ্জের শাল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রেণী পেশার লোকজন তাকে শেষ বারের মত দেখার জন্য ভীড় জামান।

সেখানে প্রথমে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধাঞ্জলী দেন। পরে আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নূরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গার্ড অব অনার প্রদান এবং ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন।

Fojlu-Rahman-Chowdhury

পরে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন মরহুমের ছেলে ক্বারী উবাদুর রহমান চৌধুরী। জানাজার নামাজ পূর্ব মরহুমের ভাগ্নে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন, আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নূরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য নজমূল হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধ রাশিদুল হাসান চৌধুরী শিবলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মর্তুজ আলী, মরহুমের ভাতিজা হুমায়ূন চৌধুরী, বড় ছেলে চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহিম চৌধুরী প্রমূখ।

এ সময় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান বলেন- জাতীয় জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে বিভিন্ন এলাকায় শক্র মুক্ত করেছেন ফজলুর রহমান চৌধুরী। তার এই অবদানের কথা আজীবন এ দেশে স্মরনীয় হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন-ব্যক্তি জীবনে ফজলুর রহমান চৌধুরী ছিলেন অত্যান্ত ভালো মানুষ। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

এ সময় অন্যান্য বক্তারা বলেন-ফজলুর রহমান একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন। তিনি এলাকার মানুষের সুখ দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং এলাকায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি করার জন্য স্কুল, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

তিনি সৌরলী হাইস্কুল প্রতষ্ঠা করেছেন এবং এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা সড়ক বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন।

তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

Fojlu-Rahman-Chowdhury

জানাজার নামাজ শেষে সৌলরী কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এর আগে দুপুরে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা হলরুমে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের নির্দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরীর মৃত্যুর গভীর শোক প্রকাশ ও ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরী ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচিগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ জাতীয়র জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।

শুরুতে তিনি ভারতে ঢাল ক্যাম্পের ট্রেনিং ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১১নং সেক্টরের কোম্পানী কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি অভ্যন্তরীন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে তার নেতৃত্বে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, কিশোগঞ্জের অটগ্রাম, নিকলী, ইটনা, নেত্রকোনার কলমা কান্দ, সুনামগঞ্জের তাহেরপুর ময়মনসিংয়ে বালুকা ও ফুলপুর থানা হানাদার মুক্ত করা হয়।

যুদ্ধ শেষে তিনি ১৯৭২ সালে আজমিরীগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠা কমান্ডার নির্বাচিত হন। ৩২ বছর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।

বীরমুক্তি ফজলুর রহমান চৌধুরী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাগ্নে ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সাবেক সফলমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ এর ফুফাত ভাই।

তিনি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী ও নিউয়ার্ক মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরীর আপন মামা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরী
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরী।

দিকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরী মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সদস্য সদস্য ও হবিগঞ্জ আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির।

তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতির পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরীর ইন্তেকাল, হবিগঞ্জ নিউজের শোক প্রকাশ

এছাড়াও হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদের বাবা জাতীয় শ্রেষ্ট সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী শাহনওয়াজ মিল্লাদ, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শংকর পাল, হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সজীব আলী, বিশিষ্ট সাংবাদিক ফ্রান্স প্রবাসী ফেরদৌস করিম আখনজী, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান টিভির হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি এসএম সুরুজ আলী, বানিয়াচং উপজেলা যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম আখনজী প্রমূখ।