১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:১৪

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

হবিগঞ্জের ভূয়া এসপি রাহুল যেভাবে প্রতারণা করে

হবিগঞ্জের ভূয়া এএসপি নিলান্দ্রী শেখর রাহুল গোপ (৩৫) আটক হওয়ার পর বেড়িয়ে এসেছে অনেক কাহিনী।

তাকে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন থানায় ১২টি প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলা হলো কণ্ঠশিল্পী মেহজামিন মেরিন এর সাথে বিয়ের নামে প্রতারণার মামলা।

মেহেরিনের বরাত দিয়ে ভাটারা থানার এসআই বেলায়েত হোসেন ভূইয়া জানান, ১৯ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার একটি অভিজাত এলাকার বিয়েতে পরিচয় হয় মেরিনের সাথে রাহুল গোপের।

এএসপি পরিচয় জেনে ২ সন্তানের জননী স্বামী পরিত্যাক্তা মেহেরিন রাহুলের প্রেমে পড়ে যায়।

এক পর্যায়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেহেরিনের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় রাহুল।

পরে বিয়ে না করে রাহুল নানা রকম টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে সে গা-ঢাকা দেয়।

পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর মেহেরিন জানতে পারে সে ভূয়া এএসপি এবং একজন প্রতারক। এ ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।

এরকম আরো নারী ও পুরুষের সাথে এএসপি পরিচয় দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক রাহুল।

প্রসঙ্গ, গত ১৯ জানুয়ারি রাতে কুড়িলে অবস্থিত হোটেল প্রগতি ইন থেকে অভিযুক্ত রাহুলকে নারীসহ গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ।

এই সময় তার কাছ থেকে বাংলাদেশ পুলিশের আইডি, একটি নোকিয়া মোবাইল, একটি আইফোন, ১৯ লাখ টাকা ও একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

গত ১৪ জানুয়ারি হোটেল প্রগতি ইনে পুলিশের আইডি কার্ড দেখিয়ে এএসপি পরিচয়ে রুম ভাড়া নেয় অভিযুক্ত রাহুল গোপ। পরে ১৬ জানুয়ারি হোটেল কর্তৃপক্ষ ভাড়া চাইতে গেলে বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে।

সন্দেহ হলে ভাটারা থানা পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ হোটেল প্রগতি ইনে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্তের পরিচয় জানতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে শুরু করে।

এক পর্যায়ে তিনি ভূয়া পুলিশ পরিচয়ে হোটেলে অবস্থান করছেন বলে স্বীকার করে এবং মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এসআই বেলাল ভূইয়াকে।

ভূয়া এএসপি রাহুল বানিয়াচং উপজেলার ১৫নং পৈলারকান্দি ইউনিয়নের বিথঙ্গল গোয়াল হাটি সুদি ব্যবসায়ী অজিত গোপের পুত্র ও শহরের উত্তর শ্যামলীর বাসিন্দা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাহুল ৬ মাস পূর্বে হবিগঞ্জ বানিজ্যিক এলাকার উত্তরা কমপ্লেক্সের সংলগ্ন পূর্বে পুরান মুন্সেফীতে ৯০ লাখ টাকায় একটি ৩ তলা অট্টালিকা ক্রয় করে ওই ভবনটিকে ৫তলায় রূপান্তরিত করেন।

এই সংস্কার কাজ ব্যয় হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। তার পিতার নামে এই “অজিত ভবন” হিসাবে নামকরণ করা হয়।

সুরম্য অট্টালিকাটি বাংলাদেশ পুলিশের ডিজাইন ও রংয়ে দৃশ্যমান রয়েছে। যে কেউ দেখলে মনে হবে এটি পুলিশের কোন উধ্বতন কর্মকর্তার বাড়ী।

ভূয়া এএসপি রাহুল গোপ নিয়মিত হবিগঞ্জ যাতায়াত করতেন (পুলিশ ডিএমপি/পুলিশ এসএমপি) স্টিকার সম্ভলিত একটি বিলাশ বহুল গাড়ীতে।

তার স্বীকারোক্তি মতে ঢাকার একটি বাসা থেকে পুলিশের বিভিন্ন পোশাক, সিল, জুতা, বেইজ, লগু, বাশি, খেলনার পিস্তলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।

ভাটারা থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ভুক্তভোগীরা থানায় এসে অভিযোগ করেছেন।

রাহুলের বিরুদ্ধে ৭দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো রহস্য বেরিয়ে আসবে।

হবিগঞ্জ থানার পুলিশকেও খোঁজ খবর নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বুধবার রাহুল অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ হলে সদর থানার একদল পুলিশ তার বিলাসবহুল বাসায় অভিযান চালান। কিন্তু ওই বাসায় কাউকে খোঁজে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি মোঃ মাসুক আলী বলেন, ভুক্তভোগীরা যদি থানায় এসে অভিযোগ করে তাহলে প্রতারক রাহুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার সাথে কারা জড়িত তাদেরকেও খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।