জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

হারানো স্বামীর স্মরণে শিক্ষিকার আবেগঘন ফেইসবুক পোস্ট!

পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া শিক্ষক স্বামীর বিচ্ছেদ বেদনায় বিভোর হয়ে তার স্মরণে ফেইসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে নেটিজেনদের দৃষ্টি কেড়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা। ওই শিক্ষিকার নাম মুস্তাফিজা ফিজো। তিনি মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউপি আলহাজ্ব এসএম ফয়সাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন।

রবিবার(৫ অগাস্ট) ওই শিক্ষিকা তার মৃত স্বামীকে উদ্দেশ্য করে তার ভেরিফাইড ফেইসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেন,”যদি জানতাম আর ফিরে আসবে না, তবে সেদিন বাড়ি থেকে বের হতে দিতাম না।”

পোস্টের কমেন্টে খাইরুল পাঠান নিলয়, জিজ্ঞাসা করেন, “কি হয়েছিল?” আসমা আক্তার, দিদারুল ইসলাম ও মোহাম্মদ মোস্তাক লিখেন, “সবই ভাগ্য।”

জানা যায়, শিক্ষিকা মোস্তাফিজা ফিজোর শিক্ষক তোফাজ্জল আলম খানের সাথে ভালোবেসে বিয়ে হয়। শিক্ষক স্বামী স্থানীয় উত্তর বেজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বিয়ের পর হাসি-আনন্দে চলছিল শিক্ষক দম্পতির সংসার। ঘরে আসে একটি ছেলে সন্তানও।

২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ঘরের জন্য বাজার করতে যান তোফাজ্জল। সেই যাত্রায় ছিল তার স্ত্রীর সাথে জীবিত অবস্থায় শেষ সাক্ষাত। আর ফিরে আসা হয়নি তার। পথমধ্যেই হার্ট অ্যাটাক করে স্বামী চলে যান পরপারে।

শেষমেষ রাত্রিবেলায় স্ত্রীর হাতের রান্না করা মাছ-মাংস খেয়েছিলেন পেটভরে। এটাই স্বামীর সাথে শিক্ষিকা ফিজোর শেষ স্মৃতি। মৃত্যুদূত আজরাইলকে থামানো যায় না। ২০২৫ আগস্ট মাসে বৃষ্টির দিনে ওই নিঃসঙ্গ শিক্ষিকা সেই স্বামীকে হৃদয়ের গভীর থেকে করছেন অনুভব। ফেইসবুকে পোস্ট লিখে জানালেন যে, যদি জানতেন আর ফিরবেন না তাহলে বাসা থেকে বের হতেই দিতেন না। যদিও ওই শিক্ষিকা জানেন আজরাইলকে ধরে রাখা যায় না। তার পরেও আবেগী মন না শুনে বারণ!

বলা হয়ে থাকে চোখের আড়াল মানে মনের আড়াল। মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। কিন্তু ফিজো ম্যাডাম বদলান নি।হারানো জীবনসঙ্গী নিয়ে অতীত প্রেমের স্মৃতিচারণই এখন তার জীবন। হৃদয়ের যে স্থানে স্বামীকে বসিয়েছেন সেই স্থানে কাউকেই বসাবেন না সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

বাসা থেকে নতুন বিয়ের চাপ দেয়া হলেও স্বামীর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চান একমাত্র আশার আলো ছেলেটিকে নিয়ে। ছেলেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। শিক্ষক স্বামীর মায়াময় ছবি আর তার লেখা কবিতা নিয়ে কাটে ওই শিক্ষিকার সময়।

পৃথিবীতে কাক পাখি ও তিমি মাছ সঙ্গী হারানোর পর দ্বিতীয়বার কখনো জোড়া বাঁধে না। শিক্ষিকা ফিজো খেত্রেও যেন তেমনি। কবি সুফিয়া কামাল যেমন তার মরহুম স্বামীর প্রেমে সদা বিভোর থাকতেন এবং তাহারেই পড়ে মনে কবিতার মাধ্যমে এর প্রকাশ করেছিলেন। তেমনি এই শিক্ষিকাও তার স্বামীর স্মৃতিবাহনের প্রায় অনুরূপ উদাহরণ।

উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পেয়ারা বেগম বলেন, তার সাথে আমার পরিচয় নেই। আপনার মাধ্যমে যা শুনলাম সত্যিই ব্যতিক্রমী। স্বামী ও সন্তানের প্রতি এমন নির্মোহ ভালোবাসা থাকলেই আমাদের পরিবারগুলো বেঁচে থাকবে। পরিবারগুলো বেঁচে থাকলে আমাদের দেশ ভালো থাকবে। আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সাধ্যমত ওই মহান শিক্ষিকাকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করবো।

স্বামীপ্রেমের এমন নজিরে উৎসাহ প্রদান করেছেন মাধবপুর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কবির হোসেন।কবির হোসেন আন-অফিশিয়ালি বলেন, মৃত স্বামীর প্রতি এতো ভালোবাসা এবং পরিবারের প্রতি তার এমন দায়িত্বশীলতা সত্যিই একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ। তিনি শুধু একজন ভালো শিক্ষিকাই নন তিনি একজন ভালো মা ও ভালো স্ত্রী বটে। এমন আদর্শ শিক্ষিকা দ্বারা শিক্ষার্থীরা ও সমাজ উপকৃত হবে।