মো:নজরুল ইসলাম: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জে শিক্ষকদের ৫ দফা দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত।
শিক্ষক নামটি শুনলেই শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে সম্মান জানান সকলে,দেশের ভবিষ্যত গড়ার বহু কারিগরের সৃষ্টি হয় শিক্ষার মাধ্যমে। শৈশব ও কৈশোরের প্রাপ্ত এই শিক্ষার শক্ত ভিত আমাদের আগামীর সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে দেয়, সেই শিক্ষকরাই আছেন কর্মজীবনে নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝে। হচ্ছেন বঞ্চনার স্বীকার।
রবিবার (৫ই অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দেশের ৬৪টি জেলার মতো হবিগঞ্জেও নিজেদের অধিকার আদায় ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠাসহ ৫ দফা দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।
দুপুর ১২ টায় বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্র মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদা নাজনীন। তিনি বলেন, মাধ্যমিক স্তরে ২১,২৩২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯০,৬৩,৪২২ জন এবং শিক্ষকের সংখ্যা ২,৯৩২৮৯ জন। মাধ্যমিক স্তরের অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট জনবল দেখভাল করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মাত্র ১ জন উপপরিচালক ও ২ জন সহকারী পরিচালক আছেন। বিশাল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর হিমশিম খাচ্ছে।
স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করলে শিক্ষা কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা আসবে।
ইতিপূর্বে মাত্র ১,২৬৪ টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং ৯,৬৫৬ টি মাদ্রাসার জন্য আলাদা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর গঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল যা আলোর মুখ দেখেনি।
শিক্ষকদের ২য় দাবী হলো, সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা। মাধ্যমিকের ১৫ হাজার শিক্ষক কর্মকর্তাদের বিপরীতে পদোন্নতিযোগ্য পদ মাত্র ৪%। ফলে ৩২-৩৩ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি ছাড়াই অধিকাংশ শিক্ষক অবসরে যান।শিক্ষকদের ৩য় দাবী হলো, আঞ্চলিক উপপরিচালকের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষমতা পূর্নবহালসহ মাধ্যমিকের সকল কার্যালয়ে স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা রক্ষা।
৪র্থ দাবী হলো,বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার সকল শুণ্যপদে নিয়োগ,পদোন্নতি ও পদায়ন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর নিয়োগ বিধিমালা ২০২১ অনুযায়ী সিনিয়র শিক্ষক পদ থেকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর ৫০% পদে পদায়নের বিধান থাকলেও বিগত ৫ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
শিক্ষকদের ৫ম দাবী হলো, বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড এর মঞ্জুরী আদেশ প্রদান। তিন মাসের মধ্যে আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে ইতিবাচক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ভুক্তভোগী শিক্ষকদের হতাশা যেনো বেড়েই চলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের ন্যায্যদাবী বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়সহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এসময় বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) নাছিমা আক্তার খানম, রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো: আবুল মঈন, বিকেজিসি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো: নুরুল হুদা নেজামী,সফিউল আলম, মোহাম্মদ আনজব আলী,মোহাম্মদ বিলাল হোসেন,মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মো:শফিকুল ইসলাম, দীপক চন্দ্র সরকার, মো: আশিকুর রহমান, সহকারী শিক্ষক মো:নজির মিয়া, জয়দেব রায়, মো: মাহফুজুর রহমান,নাসরিন আক্তার রিনা,মো: আতাউর রহমান,
হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শংকর চন্দ্র দেব,মো:নজরুল ইসলাম, মো: জিসানুর রহমান,মো: রাসেল,
গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো:মনির হোসেন খান, মো:কামরুল হাসান,
রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো: আবু ইসহাক চৌধুরী, বানিয়াচং এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো:বায়জিত সহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক,কর্মকর্তা, এবং দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক সমাচার, দৈনিক হবিগঞ্জের বাণী,দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক প্রভাকরের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিক গণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদা নাজনীন বলেন হবিগঞ্জে ৬টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮০টি শিক্ষকের পদ রয়েছে কিন্তু এতে কর্মরত আছে মাত্র ১১৫ জন। পদ শূণ্য ৬৫ টি। ৬টি স্কুলে ৬টি প্রধান শিক্ষক ও ৮টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত ।
৯ টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পদও শূণ্য রয়েছে।
পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠ দানেও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়,ফলে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।