জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমেরীগঞ্জ) আসনে কে হতে যাচ্ছেন আগামীর এমপি?

জুনাইদ আহমেদ: হবিগঞ্জ-২ আসন পূর্বে সিলেট-১৬ আসন হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে এটি হবিগঞ্জ-২ আসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর থেকে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনসহ এখন পর্যন্ত মোট ১১টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

 

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে ৮ বার,

জাতীয় পার্টি ২ বার এবং বিএনপি ১ বার।

১৯৮৬-সাল থেকে ২০২৪ এর ডামি এমপিসহ বিজয়ীদের নাম,

১৯৮৬ – সিরাজুল হোসেন খান – জাপা

১৯৮৮ – সিরাজুল হোসেন খান – জাপা

১৯৯১ – শরীফ উদ্দিন আহমেদ – আওয়ামী লীগ

১৯৯৬ – জাকারিয়া খান চৌধুরী – বিএনপি

জুন ১৯৯৬ – শরীফ উদ্দিন আহমেদ – আওয়ামী লীগ

১৯৯৭ (উপনির্বাচন) – সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত – আওয়ামী লীগ

২০০১ – নাজমুল হাসান জাহেদ –আওয়ামী লীগ

২০০৮ – আব্দুল মজিদ খান – আওয়ামী লীগ

২০১৪ – আব্দুল মজিদ খান – আওয়ামী লীগ

২০১৮ – আব্দুল মজিদ খান – আওয়ামী লীগ

২০২৪ – ময়েজ উদ্দিন শরীফ – আওয়ামী লীগ

 

এই আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের হলেও জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে এর পট পরিবর্তন হয়েছে। এইবার যেহেতু আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নেই তাই আওয়ামী লীগের ভোট এখানে ফ্যাক্টর। এই আসনে আওয়ামী লীগের ভোট রয়েছে প্রায় ৪৭%, বাকি ৫৩% রয়েছে অন্যান্য দলের।

 

আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে হবিগঞ্জ-২ আসনে ইতোমধ্যে জামায়াত তার একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল বাছিত আজাদ হুজুর।বিএনপি এখনো অফিসিয়ালি প্রার্থী ঘোষণা করে নাই।

 

আগামী নির্বাচনে কে হতে যাচ্ছেন হবিগঞ্জ-২ আসনে এমপি? একটু পর্যালোচনা করে দেখা যাক।

 

খেলাফত মজলিসের প্রার্থী :

বানিয়াচংয়ের “বড় হুজুর” হিসেবে সমাধিক পরিচিত, খেলাফত মজলিসের বর্তমান আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আযাদ হুজুর একজন দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাবান আলেম। তাঁর চিন্তাভাবনা, নেতৃত্বদক্ষতা ও ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি অবিচল অবস্থান অনুকরণীয়। আব্দুল বাছিত আজাদ হুজুর যেমন একজন আলেম হিসেবে সমাদৃত পরিচিত, তেমনি জনসমর্থনও রয়েছে ব্যাপক। হবিগঞ্জ-২ আসনে আব্দুল বাছিত আজাদ হুজুরকে খেলাফত মজলিস এখন পর্যন্ত এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর পূর্বে খেলাফত মজলিস এই আসনে কখনই একক প্রার্থী ঘোষণা করে নাই।

 

উল্লেখ্য যে, আব্দুল বাছিত আজাদ হুজুর ২০১৮ সালের ২০-দলীয় জোটে এই আসনে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট আব্দুল মজিদকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো ।

 

এইবার যদি দেশের সকল ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁকে সমর্থন দেন, এবং হবিগঞ্জ-২ আসনে আব্দুল বাছিত আজাদ হুজুরকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন, তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের সূচনা করবেন এবং বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও খুব বেশি।

 

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী :

জামায়াতে ইসলামী এখন পর্যন্ত এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এডভোকেট জিল্লুর রহমান আজমী ভাইকে, যিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা হাতিরঝিল থানার আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি ছিলেন।

জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করার পর এডভোকেট জিল্লুর রহমান আজমী ভাই ব্যাপক নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আজমেরীগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং বানিয়াচং উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আজমী ভাই ভালোই দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন। বলতে গেলে এখন মোটামুটি ভালো একটি অবস্থান তিনি তৈরি করে ফেলেছেন।

ইতোমধ্যে শিবির ডাকসু, জাকসু, চাকসু এবং রাকসুতে যে বিজয় অর্জন করেছে, এর একটা প্রভাব গ্রামগঞ্জে পড়ছে। শিবিরের বিজয় গ্রামগঞ্জে জামায়াতের বিজয়ই মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া দিন দিন জামায়াতের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে জামায়াত যদি জোটবদ্ধ হয় তাহলে জামায়াত হয়তো এই আসনটা ছেড়ে দিতে পারে। উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী এই আসনে একক প্রার্থী দিয়ে ভোট পেয়েছিল ৯.২% (প্রার্থী ছিলেন ফজলুল করিম) এবং ১৯৯৬ সালে একক প্রার্থী হিসেবে ভোট পেয়েছিল ৩.৮% (প্রার্থী ছিলেন আশরাফ উদ্দিন)।

 

৩: বিএনপির প্রার্থী :

বিএনপি এই আসনে এখন পর্যন্ত একক প্রার্থী ঘোষণা করে নাই। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুইজন –

একজন আহমেদ আলী মুকিব, যিনি বর্তমানে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক। এর পূর্বে তিনি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সৌদি আরব বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

অন্যজন হলেন ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বর্তমান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য।

 

এই আসনে সম্ভবত মনোনয়ন পাবেন ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন জীবন। তাঁর ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে এবং দলের জন্য তিনি দেশে থেকেই অনেক কিছু করেছেন। অন্যদিকে আহমেদ আলী মুকিবেরও ভালো জনসমর্থন রয়েছে; ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

শেষ পর্যন্ত বিএনপি কাকে মনোনয়ন দেয়, সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এই আসনে ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন জীবন ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৩.০% জনসমর্থনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন।

 

তবে এটা নিশ্চিত,এই আসনে বিএনপির জিতে আসাটা এত সহজ হবে না। কারণ জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলো যদি জোটবদ্ধ হন তাহলে এই আসনের প্রার্থী হবেন খেলাফত মজলিসের আমীর, বানিয়াচংয়ের বড় হুজুর খ্যাত আব্দুল বাছিত আজাদ।

হুজুরের ব্যাপক পরিচিতি এবং জনসমর্থন রয়েছে, বিজয়ের সম্ভাবনাও বেশ বেশি।