বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলা বাজারে (ওএমএস) আটা কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ভিড় দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরকারি বরাদ্দ কম থাকায় হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকায় অনেকেই খালি হাতে ফিরছেন।
এদিকে সিদ্ধচাল বিক্রি বন্ধ থাকায় আরও বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ।
সরজমিনে দাউদনগর বাজার, হবিগঞ্জ রোড ও হাসপাতাল সড়কের ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে— সকাল থেকে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন পড়ে রয়েছে। জায়গা দখল ও লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া দেখা যায়, বিক্রেতারাও পড়ছেন বিপাকে।
সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ডিলাররা ৫ কেজি করে আটা বিক্রি করছেন। দুপুরের আগেই প্রায় ৫০০ কেজি আটা ১০০ জন ক্রেতার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়।
দাউদনগর বাজারের ওএমএস ডিলার ও সাবেক কাউন্সিলর মো. মাসুক মিয়া জানান, “শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৭০% মানুষ হতদরিদ্র। দিনমজুর, শ্রমিক ও ভাসমান মানুষের সংখ্যা এখানে বেশি। সকালে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার আগেই নারীদের লাইন পুরুষদের চেয়ে বেশি থাকে।”
তিনি আরও জানান, “পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৬ জন ওএমএস ডিলার নিয়োগ দেওয়া হলেও বর্তমানে ২ জন ডিলারকে প্রতিদিন ১ হাজার কেজি আটা বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।”
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে পৌর এলাকায় দুটি কেন্দ্রে প্রতিদিন ৫০০ কেজি করে আটা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজির দাম ২৪ টাকা, এবং প্রতিজন সর্বোচ্চ ৫ কেজি পর্যন্ত কিনতে পারেন।
বাজারে বর্তমানে খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪৫–৪৮ টাকায় এবং প্যাকেটজাত আটা ৫২–৫৫ টাকায়। তাই ওএমএস আটার দাম কম হওয়ায় সেটি নিয়ে আগ্রহও বেশি। তবে অনেকেই এই আটা কিনে ৩৫–৪০ টাকা দরে গ্রাম বা হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি করছেন বলেও জানা গেছে।
রেলস্টেশন এলাকার ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ী মো. ছায়েদ আলী বলেন, “ওএমএস আটা দিনমজুর ও শ্রমিকদের জন্য আশীর্বাদ। প্রতিদিন শত শত মানুষ আটা কিনতে আসে।”
বাগুনীপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী ও আবু রবি দাস জানান, “আমরা ৫ কেজি আটা ১২০ টাকা দিয়ে কিনছি। বরাদ্দ বাড়ালে আরও অনেকে উপকৃত হবে।”
এই বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে দুই ডিলার প্রতিদিন ১ হাজার কেজি আটা বিক্রি করছেন। বরাদ্দ মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়। আমরা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছি।”
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব হোম দাস বলেন, “নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওএমএস আটার চাহিদা তীব্র। বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”


