১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৭:৩৫

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

একজন মানবিক সহকারী কমিশনার ইভান

একজন মানবিক সহকারী কমিশনার ইভান। প্রতিদিনের মত শনিবার সকালে কঠোর লকডাউনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষে মোবাইল কোর্টে বের হন। কাজ করতে করতে একসময় গিয়ে থামেন শহরের মোতালেব চত্বরে। বিজিবি-কে সাথে তিনি কাজ করছেন, যাদের মুখে মাস্ক নাই তাদেরকে মাস্ক ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করছেন।

শনিবার (৩১জুলাই) দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের মোতালেব চত্বরে আমি আমার মত করে ছবি আর ভিডিও ধারণ করছি। হঠাৎ কানে ভেসে উঠল একজন মহিলার কান্নার শব্দ, তাকিয়ে দেখি একজন মহিলা কান্না করে মোবাইল কোর্টে দ্বায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শোয়েব শাত-ঈল ইভানের কাছে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে খুজে পেতে সহায়তার জন্য কান্না করছেন।

সহকারী কমিশনার ইভান একদিকে মহিলার কথা শুনছেন আর অন্যদিকে তার ছেলের ছবি হাতে নিয়ে বেশ কয়েকবার দেখছেন, কয়েক মুহুর্তের জন্য মনে হলো ইভান চলে গেছেন অন্য কোথাও।

শহরের মোহনপুর এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসা থাকেন শাহেনা আক্তার। তিনি জানান, গত ২৫মে ২০২১ বিকাল ৩টার সময় তার ছেলে মিলন, বয়স ৮বছর, চকলেট আনার কথা বলে বাসা থেকে বের যায়, আর ফিরে আসেনি। বাবা হারা ৩ সন্তানকে নিয়ে অন্যের বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালান শাহেনা আক্তার । থানায় জিডি করেছেন, এখনো ছেলের কোন সন্ধান পান নাই।

সব কথা শুনে সহকারী কমিশনার সাথে সাথে মোবাইলে কথা বললেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুক আলীর সাথে। তিনি মহিলাকে থানায় নিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

সহকারী কমিশনার ইভান তখন হারিয়ে যাওয়া ছেলের মা-কে বললেন, চলেন আমার সাথে, থানায় গিয়ে খুজ করে দেখি। কয়েক সেকেন্ডের জন্য শাহেনা বেগমের মুখের হাসিটা যেন অমাবস্যার আধারে পূর্নিমার চাদ।

তারপর তিনি মিলনের মা শাহেনা বেগমকে নিজের গাড়ীতে করে সদর থানায় নিয়ে আসেন। থানায় এসে সেকেন্ড অফিসার জুয়েল আহমদের সাথে কথা বলেন। জুয়েল আহমদ জানান, আমরা সর্বোচচ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টা দেখছি এবং দেখব, ইতিমধ্যে সকল জেলায় এবং উপজেলায় ছবি এবং তথ্য দিয়েছি। খোজ পেলেই আমরা আপনাকে জানাব।

এরপর সহকারী কমিশনার ইভান নিজের পকেট থেকে মহিলার হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়ে বলেন, আপনার ছেলের বিষয়টি পুলিশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, ইনশাআল্লাহ অতিশীঘ্রই আমরা ভালো কোনো সংবাদ পাবো। আমার নাম্বারটি নিন, যেকোনো প্রয়োজনে ফোন দিবেন, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো, আপনার পাশে দাঁড়াবার জন্য।

কথা গুলো শেষ হতেই দেখে মনে হলো, শাহেনা বেগম কোথাও যেন একটা শান্তির ছোয়া পেলেন। আবারও একবুক আশা নিয়ে বাসা গেলেন। মানুষ মানুষের জন্য, মানবতা মানবতার জন্য।

ভালো থাকুক সহকারী কমিশনার মোঃ শোয়েব শাত-ঈল ইভান এর মতো দেশের তরে কাজ করে যাওয়া মানুষ গুলো, যারা স্বপ্ন দেখায় এক নতুন বাংলার আর নবদিগন্তের।