৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:২৪

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ

বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত, মানবতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে সোচ্চার বেগম সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ। বাংলা ভাষার বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক তিনি। বহু গুণের কারণে বাংলার মানুষ তাকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করে।

১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদের এক অভিজাত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন সুফিয়া কামাল। তখন নারীশিক্ষা ছিল প্রায় দুঃসাধ্য কল্পনা। তাঁর বাবা সৈয়দ আবদুল বারী ছিলেন একজন আইনবিদ। মা সাবেরা বেগমের কাছে পড়তে শেখেন তিনি। মাত্র বারো বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সাহিত্যপাঠে ছিল স্বামীর অনুপ্রেরণা, যা তাঁকে পরবর্তীতে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে।

১৯২৩ সালে রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’। এটি প্রকাশিত হয় বরিশালের তরুণ পত্রিকায়। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতা বাসন্তী। তিনি ছিলেন বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক। ১৯২৯ সালে তিনি বেগম রোকেয়ার ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’ এ যোগ দেন। এ সময় বেগম রোকেয়ার আদর্শ তাকে আলোড়িত করে। ১৯৩১ সালে তিনি মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম ইন্ডিয়ান মহিলা ফেডারেশনের সদস্য নির্বাচিত হন।

সুফিয়া কামাল ১৯৩২ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ত্রিশের দশকে কলকাতায় থাকার সময় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র ও বেগম রোকেয়ার মতো দিকপালদের সান্নিধ্য পান তিনি। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’। এই কাব্যগ্রন্থে ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রশংসা।

তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো- সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে। গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’। ভ্রমণকাহিনী ‘সোভিয়েত দিনগুলি’। স্মৃতিকথা ‘একাত্তুরের ডায়েরি’। সুফিয়া কামাল ৫০টির বেশি পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমী, সোভিয়েত লেনিন, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক উল্লেখযোগ্য।

প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে সংসার শুরু করেন সুফিয়া কামাল। ১৯৪৭ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। এর মাঝে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শিশুদের সংগঠন ‘কচিকাঁচার মেলা’।

১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। এ সময় একদল তরুণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গঠন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি সুফিয়া কামাল অংশ নেন গণঅভ্যুত্থানে। বর্জন করেন পাকিস্তান সরকারের দেয়া ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে গেছেন অকুতোভয় সহযোগিতা।

সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।