৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৪২

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

নবীগঞ্জের ফাতেহা হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার চাঞ্চল্যকর ফাতেহা হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী রাজু কারাগারের অধিনস্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ০৬ জুলাই (মঙ্গলবার) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেছে।

হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে দীর্ঘ ২৩ মাস ২৮দিন কারাভোগ করেছিলো এই রাজু।

নিহত রাজু আহমেদ নবীগঞ্জ পৌর এলাকার আনমানু গ্রামের মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে।

জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলায় ২০০২ইং সনের আগষ্ট মাসে(ফাতেহা বেগম) নামের ৬ মাসের অন্তসত্ত্বা গৃহবধূকে গনধর্ষণ করে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করা হয়। তৎকালীন সময়ে এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনায় নবীগন্জ থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটি নিয়েও ছিলো অনেক নাটকীয় জটিলতা। অবশেষে মামলাটি চলে আসে সিআইডির কাছে। পরে সিআইডি’র তদন্ত কার্যক্রমে সবকিছু বেড়িয়ে আসে।

তারপর বিজ্ঞ আদালত এই মামলার সবকিছু পর্যালোচনা করে ৪ জনকে যাবজ্জীবন,২ জনকে ১ লাখ টাকা করে অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদন্ড সাজা প্রদান করেন।

এছাড়াও ২ জন আসামীকে বেকসুর খালাস করে দীর্ঘ ১৭ বছর পর রায় প্রদান করে মামলাটি শেষ করা হয়।

এরপর থেকেই হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে নিহত রাজু সহ অপর সকল আসামীদের বন্দি জীবন শুরু হয়।

এদিকে হঠাৎ রাজু অসুস্হতা বোধ করলে তাৎক্ষণিক জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ অসুস্থ অবস্থায় রাজুকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ১ লা জুলাই রাজু আহমদকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ।

সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন অবস্হায় (মঙ্গলবার) সকালে মারা যায় রাজু।

এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের মামলার এজাহার ও বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, ২০০২ইং সালের ২০ আগষ্ট রাত আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় স্বামী-স্ত্রীর পূর্ব বিরোধ মিমাংসার কথা বলে ফাতেহাকে বাবার বাড়ি থেকে জনৈক বাবুল মিয়ার বাড়িতে নেওয়া হয়। নিহত গৃহবধূ ফাতেহা নবীগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামের আরব আলীর মেয়ে। গৃহবধু ফাতেহা বেগম (২৪) কে যখন তার পিত্রালয় থেকে বিরোধ মিমাংসার জন্য নেওয়া হয়েছিল তখন তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলেও জানা যায়। এমন অবস্থাতে তার পাষন্ড স্বামী সাইদুল মিয়া ও অন্যান্য আসামীরা তাকে ফুঁসলিয়ে আসামী বাবুল মিয়ার বাড়ির কথা বলে নিয়ে যায়।

কিন্তু সকল আসামীরা সেইদিন বাবুল মিয়ার বাড়ীতে না নিয়ে একটি নৌকায় উঠিয়ে তাকে নিয়ে যায় শাখাবরাক নামের এক নদীতে।

সেই নদীতে নিয়ে নৌকার মধ্যেই তাকে জোরপুর্বক পালাক্রমে সবাই ধর্ষণ করে। পরে আসামীরা ফাতেহাকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে এবং মৃতদেহটি নদীর পাড়ে একটি ধান ক্ষেতে ফেলে চলে আসে।

এই ঘটনার পরদিন ২১ আগষ্ট সকাল ১১টায় সংবাদ পেয়ে শাখাবরাক নদীর পাড় থেকে ফাতেহার মৃতদেহটি উদ্ধার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ এবং লাশটি থানায় নিয়ে আসেন তারা।

এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় নিহত ফাতেহার বোন রওশনারা বেগম, বাদী হয়ে ফাতেহার স্বামী সাইদুল হক, রাজু আহমদ, আব্দুল মন্নাফ,বাবুল মিয়া,আলাল মিয়া ও আব্দুল খালিকের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-২৭। তারিখ ২১/০৮/২০০২ইং।

মামলা দায়েরের সাথে সাথে তড়িৎ গতিতে নিহত ফাতেহার স্বামী সাইদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সাইদুল হককে ব্যাপক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তখন তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত নৌকাসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেন।

এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব হিসেবে তখনকার সময়ের এসআই কামাল উদ্দিনকে নিয়োগ করেছিলেন থানার ওসি।

মামলার আইও এসআই কামাল মিয়া ২০০২ইং সনের ১লা ডিসেম্বরে ৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জসীট দাখিল করেন। এছাড়া এই নিহত রাজু আহমদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন।

এমন চার্জসীট দেখে মামলার বাদী এটার বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দরখাস্ত প্রদান করেন।

বিজ্ঞ আদালত নারাজির বিষয়টি আমলে নিয়ে হবিগঞ্জ সিআইডিকে এই মামলার পুনঃরায় তদন্তভারের দায়িত্ব প্রদান করেন।

পরে দায়িত্ব পাওয়া সিআইডি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা নিহত রাজুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করেন।

এদিকে চাঞ্চল্যকর গৃহবধু ফাতেহা হত্যাকান্ডের ঘটনায় ময়না তদন্তের রিপোর্টও চলে আসে। এই রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ফাতেহার ৬ মাসের অন্তসত্তা ও হত্যার পূর্বে ধর্ষণের বিষয়টিরও সত্যতা পাওয়া যায় রিপোর্ট থেকে।

পরবর্তীতে মামলার বিচার কার্যক্রম নিঃস্পত্তির জন্য হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলাটি স্থানান্তরিত হয়। যাহার নং নাঃশিঃ ১৩২৫/১৮।

ঘটনার প্রায় দীর্ঘ ১৭ বছর পর হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-৩ এর বিচারক এই মামলার সকল কাগজপত্র, স্বাক্ষীদের জবানবন্দি,উভয় পক্ষের কৌশলীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করেন।

এবং ৮জুলাই সোমবার ২০১৯ ইং এই মামলাটির রায় প্রদান করা হয়।

নিহত ফাতেহার স্বামী উপজেলার গহরপুর গ্রামের মকলিছ মিয়া ছেলে সাইদুল হক। পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল নুরের ছেলে আব্দুল মন্নাফ। মৃত বজলা মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া এবং আনমনু গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে রাজু আহমদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সাইদুল হক ও আব্দুল মন্নাফকে ১ লাখ টাকা করে অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ১ বছর করে কারাদন্ড এবং অপর আসামী হরিপুর গ্রামের মৃত রয়মান আলীর ছেলে আলাল মিয়া ও মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে আব্দুল খালিককে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।

এদিকে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামী পক্ষের আত্মীয় স্বজনরা উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন বলে জানা গেছে।