৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:০২

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

শায়েস্তাগঞ্জে মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে সরকারি খরচে ঘর নির্মাণ, অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় বিচারাধীন জমিতে মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে ১৫ শতাংশ জমির উপর প্রধানমন্ত্রীর উপহার ‘যার জমি আছে ঘর নেই’ সরকারী খরচে একটি ঘর নির্মাণ প্রক্রিয়া করায় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিরোধ। পাল্টা পাল্টি মামলা আর স্থানীয় বিচারকদের দারস্থ হতে হতে ক্লান্ত আমির উদ্দিনের পরিবার।

বিরোধীয় জমিতে ঘর নির্মাণ নার করার জন্য শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলামের বরাবরে আবেদন করেও কোন সুরাহা হয়নি। বরং অনিয়ম মাধ্যমে ঘর নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ করেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের (বাখরপুর) মেরাশানী গ্রামের মৃত আবিজ উদ্দিনের ছেলে আমির উদ্দিন।

জানা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মেরাশানী মৌজার জেএল নং ৯৯, খতিয়ান নং ২২৪, দাগ নং ৬১৩ এ অবস্থিত জায়গার মালিক ছিলেন তমিজ উদ্দিন। তমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর ওই জায়গার মালিক হন তার পুত্র আবিজ উদ্দিন। আবিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর ওই জায়গার মালিক হন তার ছেলে আমির উদ্দিন ও তার ভাই বোনেরা। দীর্ঘদিন ধরে উক্ত দাগের ৩৭ শতাংশ জায়গা ভোগ দখল করে আসছেন তমিজ উদ্দিনের বংশধর আমির উদ্দিন গংরা। কিন্তু এর মধ্যে ১৫ শতাংশ জায়গা আশ্রিত ফাতেমা আক্তার ও তার লোকজন নিজের বলে দাবী করেন।

এনিয়ে ফাতেমার শশুড় মোস্তফা মিয়া ১৯৯৮ সালে হবিগঞ্জ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করিলে দির্ঘদিন শুনানির পর বিজ্ঞ আদালত ২০০৬ সালে আমির উদ্দিনের বাবার পক্ষে রায় দেন। পরবর্তিতে ২০০৮ সালে জায়গা দখলের জন্য আমির উদ্দিন একটি খাস দখলের মামলা করেন। উক্ত মামলা চলাকালীন সময়ে ফাতেমা বেগমের স্বামী আলীম উদ্দিন পুনারায় আরেকটি স্বত্ব মামলা দায়ের করে মিথ্যে স্বাক্ষীর মাধ্যমে রায় নেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আবিজ উদ্দিনের ছেলে আমির উদ্দিন গংরা আপিল করেন। জায়গা নিয়ে সৃষ্ট মমালাটি উচ্চ আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন আছে।

সম্প্রতি ফাতেমা আক্তার অসহায় দরিদ্র হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর প্রাপ্তির আবেদন করলে কোনো ধরনের যাচাই বাছাই না করেই আদালতে বিচারাধীন ভূমিতে সরকারী ঘর বরাদ্ধ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম।

এব্যাপারে গত বছরের ১০ অক্টোবর বিচারাধীন জমিতে সরকারী খরচে ঘর নির্মাণ না করতে শায়েস্তাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন আমির উদ্দিন। সেই আবেদনের কোন নিষ্পত্তি না করেই নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম নিজের ক্ষমতার বলে উক্ত জায়গায় ঘর নির্মাণ করেন।

পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হোসেইন মুহাম্মদ আদিল জজ মিয়া ও ইউপি সদস্য আক্তার মিয়া সর্দারকে অবগত করলেও কোনো সুরাহা না পেয়ে আমির উদ্দিন হবিগঞ্জ আদালতে একটি ১৪৪ ধারা মামলা দায়ের করলে আদালত উক্ত স্থানে নির্মাণ কাজ না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা না মেনে ঘর নির্মাণসহ উক্ত ঘরে বসবাস করা শুরু করেন ফাতেমা আক্তার।

জমির বর্তমান মূল মালিক আমির উদ্দিন বলেন, জায়গাটি আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই জায়গাটি ভোগদখল করে আসছি। ফাতেমা আক্তারের শশুড় মোস্তফা মিয়া বানিয়াচং উপজেলার প্রতাপপুর নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তাদেরকে আমার বাবা আবিজ উদ্দিন আশ্রিত হিসেবে আমাদের বাড়িতে থাকতে দেন। হঠাৎ করে জায়গার মালিকানা দাবী করে মোস্তফা মিয়া আমার বাবার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত আমার বাবার পক্ষে রায় দেন।

পরবর্তীতে মোস্তাফা মিয়া এক সময় দলখদার হিসেবে মাঠ তার নামে করে নেন। এই সুবাধে তারা জমিতে সরকারী ঘর নির্মাণ শুরু করেন। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কাগজপত্র দেখাতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাগজ দেখানোর প্রয়োজন নেই। আদালতে গিয়ে দেখান।

আমির উদ্দিন বলেন, ফাতেমা ও তার ভাইয়েরা মিলে আমাদের উপর মিথ্যে চাঁদাবাজী মামলা করেও হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ জায়গা নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কয়েক দফায় বৈঠক করেও এর কোন সুরাহা করতে পারেনি। তারা প্রথমে বিচার মানলেও পরবতীর্তে মানতে নারাজ। বিচারের নামে বার বার হয়রানীও করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত দ্বন্ধ সৃষ্টির লক্ষে রাতদিন গালাগাল করতে থাকেন।

দখলদার ফাতেমা আক্তারের দেবর আনোয়ার বলেন, আমার বাবা জায়গাটি খরিদ করেন কিন্তু দলিল না করাতে তারা এখন অস্বীকার করছেন। আদালত সব কিছু দেখে আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। তারা আমার রায়ের আপিল করেছেন। যা বর্তমানে শুনানিতে রয়েছে। আর ওয়ার্ড মেম্বার, ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব কিছু দেখেই আমাকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্তার মিয়া সর্দার জানান, আমার জানামতে ফাতেমা বেগমের শশুড় জায়গাটি খরিদ করেছেন। দলিল করার জন্য আমরা বহুবার বিচার সালিশ করেও ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু আবিজ উদ্দিন ও তার ছেলেরা অস্বীকার করায় কোন সমাধান হয়নি। পরবর্তীতে উভয় পক্ষ আদালতের স্বরনাপন্ন হন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। তাছাড়া ফাতেমা বেগমের শশুড়ের নামে মাঠ থাকায় সবকিছু বিবেচনা করে চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাকে একটি সরকারি ঘর বরাদ্ধ দেন।

১১নং ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসেইন মুহাম্মদ আদিল জজ মিয়া জানান, আমির উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। আদালতে মামলাও চলমান। ফাতেমা বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি সরকারি ঘর বরাদ্দ আসে। ঘর নির্মাণ হওয়ার পর উভয়পক্ষের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়ায় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঐ ঘরে বসবাস না করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু ফাতেমা ও তার লোকজন না শুনে ঘরে বসবাস করতে শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতেছি।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, জায়গা সম্পত্তির বিষয়ে তিনটা বই হলো মেইন। দখল, দাখিল এবং দলিল। যদি একজনের জায়গা অন্যজনের দখলে থাকে সেটি আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে তো সরানোও যাবে না। তাছাড়া এটি আমি যোগদানের আগেই হয়েছে।

আদালতে বিচারাধীন জায়গায় সরকারি ঘর নির্মাণ না করার জন্য আপনার দপ্তরে অভিযোগ দেয়ার পরও এর সমাধান না করে কিভাবে ঘর নির্মাণ হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আদালত বুঝবে, আমরা কাগজপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি। তাছাড়া এখন মামলার কাগজপত্র না দেখে কিছু বলা যাবে না।

বিরোধীয় জমির মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে সরকারী খরচে ঘর নির্মান প্রক্রিয়া করায় এর ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় উভয় পক্ষের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হতে পারে। কোন অঘটন ঘটার আগেই বিষয়টি সমাধান করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন এলকাবাসীও।