১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:৫৪

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

মাধবপুরের সফল উদ্যোক্তা খামারি শফিউল বর খোকন

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নিজনগর গ্রামের সফল উদ্যোক্তা শফিউল বর খোকন। 2015 সালে 10 লাখ টাকা পুঁজিতে বাজার থেকে কিনেছিলেন বিদেশি জাতের 20টি গরু। সেই 20 গরু থেকে 5 বছরের মাথায় তার নিজস্ব বাড়িতে গড়ে উঠেছে ‘ নাবা এগ্রো নামে গরু মোটাতাজাকরণ ফার্ম’। শখের বসে মাত্র 20 টি ছোট গরু কেনার মধ্যে দিয়ে বিদেশি গরু পালন শুরু করেছিল সফিউল বর খোকন। সেই 20টি ছোট গরু খুলে দিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা। গড়ে তুলেছেন বৃহৎ মোটাতাজাকরন গরুর খামার। যা থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে এলাকর শত শত যুবক।

গরুর খামার ঘুরে দেখা যায়, গত কোরবানির ঈদে 28 টি গরু বিক্রির পরও দুইটি আলাদা শেডে গরু রয়েছে 50 টি। 28 টি গরুতে তার মোট বিক্রয় এসেছে 41 লক্ষ টাকা। এতে তার খরচ বাদে লাভের অংশ প্রায় 15 লক্ষ টাকা। বর্তমানে তার দুটি আলাদা শেডে বিক্রয় উপযোগী 32 টি ও বিভিন্ন জাতের বকনা বাছুর রয়েছে 18 টি। বিক্রয় উপযোগী ব্রাহামা ,নেপালি, ফিজিয়ান ও শাহীওয়াল জাতের প্রায় দশটি গরুর ওজন প্রায় দশ মন করে বাকি 22 টি গরুর ওজন গরে আট মন করে বলে জানান খামারি শফিউল বর খোকন। তিনি জানান গত ঈদে গরু বিক্রির পরেই বিভিন্ন জায়গা থেকে নেপালি ব্রাহামা শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের 18 টি বকনা বাছুর সংগ্রহ করা হয়েছে। এ গরু আগামী কোরবানি ঈদে বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত করা হবে । এসব গরুর লালন পালন এবং যত্নে কাজ করছে 6 জন শ্রমিক। খামারে ঢুকেই প্রথম শেডে রয়েছে 10 টি বকনা বাছুর। দ্বিতীয় শেডে উত্তর অংশে রাখা হয়েছে আরও আটটি বকনা বাছুর।মূল শেডের দক্ষিণ অংশে রাখা 32 টি গরু দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। প্রতিটি গরুর ওজন আট থেকে 10 মণ করে। গত কোরবানির ঈদে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা হলো করোনা পরিস্থিতিতে গরুগুলোর বিক্রি আটকে যায়। খামারি জানান এতে তার ক্ষতির কোন আশঙ্কা নাই। এসব গরুর খাবার সংগ্রহের জন্য নিজস্ব নিজস্ব 10 একর জমিতে বিভিন্ন জাতের নেপিয়ার এবং সুইট লেমন ঘাস গম এবং ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি এবং 20 একর জমির ধানের খড় সংগ্রহে আছে তার।

খামারে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, এসব বিদেশী জাতের গরু লালন পালনে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রতিদিন শ্রমিকরা জমি থেকে এসব ঘাস কেটে নিয়ে আসে। এরপর আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সাইজে এসব ঘাস কেটে গরু গুলোকে খাওয়ানো হয়।

খামার মালিক শফিউল বর খোকন জানান আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি এই গরুর ফার্ম দেখতে আসে। খামার পরিদর্শনে এসে অনেক লোক গরুর খামার করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। ইতোমধ্যে ৪ থেকে ৫ জন স্থানীয় বেকার যুবক তাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে বিদেশি জাতের গরু লালন পালন শুরু করেছে।

নাভা এগ্রোর মালিক শফিউল বর খোকন জানান খুব অল্প দিনেই আমি সফল হয়েছি। বিদেশি জাতের এসব গরু লালন পালনে শুরু থেকেই উপজেলা এবং জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় আমাকে সার্বিক সহযোগীতা এবং পরামর্শ প্রদান করে আসছে।

উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের নিজনগর গ্রামের আব্দুল গফুর মাস্টারের ছেলে খোকন। লেখাপড়া শেষে সরকারি চাকরি নিলেও ছোটবেলা থেকে গরু পালনের উপর শখ ছিল তার। তাই সে কর্মের ফাঁকে সময় বের করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গরু মোটাতাজাকরণের উপর প্রশিক্ষণ নেন। পরে নাভা এগ্রো ফার্ম নামে একটি গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে তোলেন তিনি এবং পেয়েছেন সফলতা। শখের খাতিরে গরু মোটাতাজাকরণ খামার করলেও এখন তিনি ওই এলাকার একজন সফল সফল উদ্দোক্তা (খামারী)।

প্রতিবছরই কুরবানী ঈদের প্রায় ছয় মাস পূর্ব হতেই গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেন তিনি ঈদের সময় ঐ গরু বিক্রি করে প্রায় ৮/১০ লাখ টাকা আয় করেন খোকন।

খামারের মালিক শফিউল বর খোকন জানান, যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিয়ে খামার করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫টা গরু কিনে মোটাতাজা করে কুরবানীর ঈদে বিক্রয় করি। কোরবানির ঈদে এই গরু বিক্রি করে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আয় করি। এবছর আমার খামারে 60টি গরু মোটাতাজা করে আটাশটি গরু বিক্রয় করেছি এতে আমার প্রায় 15 লক্ষ টাকা মুনাফা হয়েছে ।

খামারের শ্রমিক আবু বক্কর জানান, খোকন সাহেবের খামারে আমরা 6 জন কাজ করি। বিগত পাঁচ বছর ধরে শেডের বাইরে গরূ পালন করা হত। বিগত ৬ মাসপূর্বে শেটের ভিতর গরু গুলো উঠানো হয়। এখানে আমরাই গরু গুলো লালন পালন করি। খামারের মালিক খোকন সাহেব তিনি এখানে থাকেন না ব্রাহ্মণবাড়িয়া পোষ্ট অফিসে চাকরি করেন। তিনি প্রতি মাসে একদুবার আসেন । আমরা 6 জন গরু দেখা শুনা করি।
বর্তমানে খামারের ছোট-বড় 50 টি গরু আছে আগামী ঈদে বিক্রয় করার জন্য আরও প্রায় 30 টি গরু তোলা হবে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এক খামারে গরু লালন পালন করা হয়।

চৌমুহনী ইউনিয়ন কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের এ আইটি নাজমুল হাসান জানান, নাভা এগ্রো বহুমুখি ফার্মের এই খামার টি আমি দেখাশুনা করি। এই খামারের মালিক সরকারি চাকরি করেন। তাই তিনি সব সময় খামারে থাকেন না। মাসে এক দুই বার আসেন। খামারটি তার শখের বসে করা।

এখানে সাধারণত ক্যামিকেল ছাড়া প্রাকৃতিক খাবার ঘাস,খর দিয়ে গরু লালন-পালন করা হয়। মোটাতাজাকরণের জন্য কোন গরুকে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় না।

মাধবপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিলন মিয়া জানান, নাভা এগ্রো বহুমুখি ফার্মের সফল উদ্যোক্তা শফিউল বর খোকন। প্রাণীসম্পদ অফিসে এসে নতুন করে খামার করার অভিপ্রায় ব্যাক্ত করলে আমরা গরু মোটাতাজাকরণের পরামর্শ দেই। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী উনি কাজ শুরু করেন। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।