১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ১০:৪১

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

কোভিড-১৯ পরবর্তী স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা

মোঃ আব্দুর রহিম চৌধুরী:

কোভিড-১৯ দ্বারা যারা অাক্রান্ত হয়েছেন এবং সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন তাদেরকে করোনা যোদ্ধা বলে অনেকেই অভিহিত করে থাকেন। হ্যাঁ, তারা যোদ্ধা, জীবন যুদ্ধে বিজয়ী বীর। এদের অনেকেই অাবার প্লাজমা দান করছেন তেমন কিছু না জেনেই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তারা নিজেরাই যেখানে বিপদমুক্ত নন তারা কিভাবে অন্যকে প্রাজমা ডোনেট করেন। প্লাজমা থেরাপির বিষয়টি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এখনও অনুমোদন করেননি যদিও কিছু শর্তে এফডিএ এটিকে অনুমোদন করেছে।কারণ করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও ৬০ দিন পর্যন্ত করোনাকালের বিভিন্ন এক বা একাধিক লক্ষণ অল্পমাত্রায় হলেও অনেকের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। একটি দীর্ঘ সময় যায় রোগী তার স্বাভাবিক কর্মকান্ডে ফিরে অাসতে। সার্স ও মার্সে যারা অাক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে অাক্রান্তদের অনেকেরই সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত লেগেছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে অাসতে। করোনার ক্ষেত্রে কী হবে তা এখনও পরিক্ষাধীন।

করোনায় অাক্রান্তদের রোগের প্রকোপ ও লক্ষণভেদে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়ঃ
— সাধারণ পর্যায়ের রোগী যাদের মধ্যে তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না কিন্তু তারা ভাইরাসের বাহক।
— মধ্যম ক্যাটাগরি হচ্ছেন তারা যাদের মধ্যে হালকা জ্বর, সর্দিকাশি, গা ব্যথা, ডায়রিয়া, গন্ধ ও স্বাদহীনতা ইত্যাদি এক বা একাধিক লক্ষণ থাকে।
— মারাত্মক পর্যায়ের রোগী তারা যাদের উপরোক্ত লক্ষণ ছাড়াও তীব্র শ্বাসকষ্ট, মারাত্মক দুর্বলতা, অক্সিজেন কম থাকা ও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া এবং যাদের অাইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়।

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে যারা করোনায় ইতোমধ্যে অাক্রান্ত হয়েছেন তাদের রোগের সংক্রমণের ভয়াবহতা, রোগীর বয়স ও তার বিদ্যমান রোগের ধরনের উপর করোনা পরবর্তী জটিলতা নির্ভর করে বলে প্রতীয়মান হযেছে। যদিও এখন পর্যন্ত নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যুহার বেশি কিন্তু লিঙ্গভেদে মৃত্যুহারের বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ বের করা সম্ভব হয়নি। এখনও এই রোগটি একেবারে নতুন বিধায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই যার জন্য এর অনেক কিছুই অনুমান নির্ভর। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য যুক্ত হচ্ছে।

করোনা পরবর্তী অনেক ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে এর মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে অাক্রান্ত ব্যক্তিতে সংক্রমণ( এখনও স্বচ্ছ ধারনা নেই সংক্রমণ বাহির থেকে হয়, না নিজদেহে দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হয়) ,উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস বৃদ্ধি, কিডনিজনিত জটিলতা, যকৃতের সমস্যা, হৃদরোগজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা ইত্যাদি। এই রোগগুলো যে নতুন করে হবে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে শরীরে ঘাপটি মেরে থাকা বিভিন্ন জটিল রোগ করোনায় অাক্রান্ত হলে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এবং তাদের লক্ষণ তীব্রভাবে প্রকাশ পায়।

করোনাকালীন সময় যাদের ARDS ( Acute Respiratory Distress Syndrome) ছিল তাদের পরবর্তী সময়ে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, হৃদরোগ ও কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে।এমনকি করোনাকালে কয়েকদিনের শ্বাসকষ্টের মধ্যে ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণের ফলে অনেকের কিছু অংশ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এছাড়া যেসকল জটিল রোগী অাইসিইউ ও ভেন্টিলেটরে থাকেন তাদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে PTSD ( Post-traumatic Stress Disorder) দেখা দিতে পারে। যার ফলে রোগী উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা ও হতাশায় ভোগেন। এই রোগীদের বিষন্নতা ও অন্যান্য সমস্যা দূর করার জন্য বিশেষ ধরনের কাউন্সেলিং করতে হয়।এরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েন। অনেকেরই স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে কাজে ফিরে অাসতে পারেননা। তাই কোভিড-১৯ শুধু শ্বাসতন্ত্রের একটি রোগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। দেখা যাচ্ছে সরাসরি করোনায় অাক্রান্ত হয়ে যতো মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মানসিক চাপে ও অন্যান্য রোগের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। যার বেশিরভাগই করোনা পরবর্তী জটিলতার দ্বারা সৃষ্টি। তাই করোনা পরবর্তী রোগীর ব্যবস্থাপনার বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত।

লেখক পরিচিতি-
উপপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা, হবিগঞ্জ।