১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৯:৫০

জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

চুনারুঘাটের সাব-রেজিস্টার অফিসে দুূর্নীতি দমন কমিশন অভিযান পরিচালনা

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাব-রেজিস্টার অফিসে দুূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান পরিচালনা করেছে।

রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন দুদুকের দুই কর্মকর্তা সেখানে হানা দেন। সাব-রেজিস্টার অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, উপজেলা ভূমি অফিসে তদন্ত কাজ শেষ করে তারা যান আলোচিত ভূমির সরেজমিন অবস্থা দেখতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক অজয় কুমার সাহা এবং ডিএডি আব্দুল মালেক সারাদিন সেখানে অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।

দুদক উপ-পরিচালক অজয় কুমার সাহা বলেন, সারাদিন তথ্য সংগ্রহ এবং তদন্ত করা হয়েছে। এই তদন্তের ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট প্রদান করা হবে। তবে আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তদন্তে আলোচিত ভূমি ইব্রাহিম কবির গংদের দখলেই আছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে একটি দুর্বলতাও আছে। সেটি হল ১৯৫৬ সালে দলিল করে ওই যায়গা ক্রয় করার পর এখন পর্যন্ত কোন নামজারি করা হয়নি। আর সাব-রেজিস্টার এই অবস্থায় ভুয়া ক্রেতা দিয়ে দলিল সম্পাদক করাও সঠিক হয়নি।

প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাব-রেজিস্টার নিতেন্দ্র লাল দাশ একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এর কাছ থেকে বড় অংকের উৎকোচ নিয়ে দুই চা শ্রমিককে ভুয়া বিক্রেতা সাজিয়ে দলিল সৃষ্টি করে কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেন। ওই জমি নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি এ ব্যাপারে কোন তোয়াক্কা করেননি। পরে চা শ্রমিকরা এই প্রতারণা বুঝতে পেরে এফিডেভিট করে তা স্বীকার করেন এবং সাব-রেজিস্টারসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের করেন।

চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ মৌজার ১১৯ নং এসএ খতিয়ানের ১০৭৪ এস এ দাগের ২.৬৪ একর ভূমির এস এ রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন দেওরগাছ ইউনিয়নের আমকান্দি গ্রামের মহেশপাল এর ছেলে হেমন্ত পাল এবং দেবেন্দ্র পালের এর ছেলে দীগেন্দ্র পাল। এসএ রেকর্ডের মালিকরা ওই জমি ১৯৫৬ সালে ৭৪০ নং দলিলে বিক্রয় করেন ওই এলাকার মুনছর আহম্মদ এর কাছে। এস এ রেকর্ডে হেমন্তপালদের নাম ভুলবশত পালের স্থলে দাস লিখা হয়।

চলমান আর এস জরিপে বিষয়টি নজরে আসে এলাকার একটি ভূমি খেকো চক্রের। তারা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ওই যায়গার বর্তমান মালিক ইব্রাহিম কবির গংদের নাম না দিয়ে এস এ রেকর্ডিয় মালিক হেমন্ত পালদের নাম রেখে দেয়। কিন্তু পাল না দিয়ে সেখানেও দাস উল্লেখ করা হয়। অথচ আমকান্দি গ্রামে কোন সময় দাস সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস ছিল না।

ইব্রাহিম কবির গং বিষয়টি জানতে পেরে আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত এই জমির উপর ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। ইব্রাহিম কবির উক্ত জমি অবৈধ ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি না করে দেয়ার জন্য ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে সাব-রেজিস্টার বরাবর একটি আবেদন করেন। ফলে বিগত সময়ে সাব-রেজিস্টার যারা ছিলেন তারা ওই যায়গার কোন দলিল সম্পাদন করেননি। কিন্তু নিতেন্দ্র লাল দাস নতুন সাব-রেজিস্টার হিসাবে যোগদান করার পর উৎকোচ পেয়ে ভুয়া ক্রেতাদের মাধ্যমে দলিল সম্পাদন করেন।

গেলানী চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক বাশুদেব মুড়াকে দিগেন্দ্র চন্দ্র দাস এবং লস্করপুর চা বাগানের শ্রমিক নিপেন বাকতিকে হেমেন্দ্র চন্দ্র দাস নাম দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার পর তারা এই দলিল করেন। সাব-রেজিস্টার নিতেন্দ্র লাল দাস পরে স্বীকার করেন রাজনৈতিক নেতার চাপে তিনি এই দলিল সম্পাদন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।